নিরব চোখ
পর্ব ৩
গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ
রুহির আঙুল ফ্ল্যাশড্রাইভটার উপর থেমে থাকে কিছুক্ষণ। যেন সেটা একটা বিষাক্ত বিষফোঁড়ার মতো ঠান্ডা লাগছে হাতে।
মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে—খুলবে তো? যদি ভেতরে এমন কিছু থাকে যা ও নিজেই সহ্য করতে পারবে না? আবার যদি সেটাই হয় যা ওকে শেষ করে ফেলবে?
কিন্তু সোজা হওয়ার পথ নেই আর। যেই খেলায় ও জড়িয়ে গেছে, সেটা এখন শুধু সত্য জানার প্রশ্ন না—বেঁচে থাকার লড়াই।
রাত ১টা বেজে ৩ মিনিট।
রুহি নিজের ল্যাপটপটা চালু করে। বিছানায় বসেই ফ্ল্যাশড্রাইভটি ঢুকিয়ে দেয় ইউএসবি পোর্টে।
ড্রাইভ ওপেন করতেই দেখতে পায় একটি ফোল্ডার—"For Ruhi_Only"
ভেতরে তিনটি ভিডিও ফাইল। একটি নাম:
“Before_You_Knew”,
আরেকটি: “They_Lied”,
তৃতীয়টি: “Truth_And_Trap”।
রুহি প্রথম ফাইলটি ওপেন করে—"Before_You_Knew"। ভিডিও চলতে শুরু করে।
ক্যামেরার ফ্রেমে তার বয়ফ্রেন্ড রায়ান। রায়ান—যাকে রুহি ভাবত তার সবচেয়ে কাছের মানুষ।
কিন্তু রায়ানের পাশে আরও দু’জন—তারা হাসছে, এক অন্ধকার ঘরে বসে। কথায় কথায় বের হয়ে আসে রুহির নামে কুৎসিত ব্যঙ্গ, এমন কথা যা রুহি কখনো ভাবতেই পারেনি।
“ওর মতো সোজা মেয়েকে বোকা বানানো কোনো ব্যাপার না,” রায়ান বলছে।
“মাইন গেমস খেলতে খেলতে ও তো এখন প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।”“আরেকটু সময় দে,” পাশে থাকা একজন বলে। “তারপর প্ল্যানের দ্বিতীয় ধাপে যাব।”
রুহির কানে যেন একটা বিস্ফোরণ ঘটে। মাথার মধ্যে রক্ত উঠে যায়। ওর পুরো শরীর কাঁপতে থাকে।
দ্বিতীয় ভিডিও—They_Lied—খুলে দেখে রুহি স্কুল লাইফের পুরোনো বন্ধুদের। এক সময়ের ছায়াসঙ্গীরা কীভাবে ওকে নিয়ে ঠাট্টা করত, রেকর্ড করা ফুটেজে সব উঠে এসেছে।
তবে সব চেয়ে ভয়ানক ছিল তৃতীয় ভিডিও—Truth_And_Trap।
এই ভিডিওতে দেখা যায়, রুহিকে যেদিন পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তার আগেই সেখানে গোপনে ক্যামেরা বসানো হয়। ভিডিওর শুরুতে কয়েকজন ছেলে আলাপ করছে—
“সব রেকর্ড হবে। শুধু ভয় না, পরে ব্ল্যাকমেইলও করতে পারব।”
“ওর কোনো প্রমাণ থাকবে না। আমাদের প্ল্যান পারফেক্ট।”
“আর ওর যদি ভুলেও কাউকে বলে, তখন ভিডিও দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেব।”
রুহি আর বসে থাকতে পারে না। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু সেই চোখে এখন ভয় নেই—আছে রাগ, প্রতিশোধ।
হঠাৎ স্ক্রিনে একটি নতুন ফোল্ডার আপিয়ার হয়: “Live_Surveillance”
ওটা খুলতেই রুহি স্তব্ধ হয়ে যায়।
লাইভ ক্যামেরার ফুটেজ—ওর নিজের ঘরের! ঠিক ওর ডেস্কের কোণার ওপর দিয়ে ফ্রেম আসছে।
রুহি দ্রুত চারপাশে তাকায়। খুঁজতে শুরু করে, কোথায় সেই ক্যামেরা? খুঁজে পায় ছোট একটা হোলের মতো বসানো কিছু—ওটা থেকে ভিডিও করা হচ্ছে।
হাত বাড়িয়ে সেটা ছিঁড়ে ফেলে। টান দিয়ে ভেঙে ফেলে।
তারপর আবার ফোল্ডারে ফিরে এসে দেখে, স্ক্রিনে একটা পপ-আপ মেসেজ উঠেছে—
“তুমি এখন যা করেছো, সেটা ঠিক ছিল। কিন্তু এবার পালানোর সময় নয়—প্রস্তুত হও।”
“তারা আবার আসবে। আর এইবার, আমি হয়তো কাছে থাকব না।”
—নীরব চোখ
রুহির বুকের ভিতরে হিম শীতল বাতাসের ঝাপটা লাগে।
“তারা” কারা?
“নীরব চোখ” কে?
সে কি সত্যিই একা?
পরদিন সকাল।
রুহির দরজার নিচ দিয়ে ঢুকে আসে একটা কাগজের টুকরো—কোনো খাম নেই, কোনো শব্দ নেই।
কাগজে লেখা:
“চতুর্থ অধ্যায়ের শুরু আজ রাত ১টায়। গ্লাসে পানির নিচে কিছু রেখে দিও। যদি দেখো রং বদলেছে, তাহলে বুঝবে—তারা তোমার বাড়ির ভেতরেই আছে।”
রুহি বুঝতে পারে, খেলা এখনও চলছে—আর, শিকার কে আর শিকারি কে, সেটা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।
চলবে…
0 Post a Comment:
Post a Comment