নিরব চোখ
পর্ব ২
গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ
রুহি আয়নার দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে।
ওয়াশরুমের বাষ্পে ধূসর হয়ে যাওয়া আয়নার মাঝে হঠাৎ যেন একটি ছায়া ফুটে উঠেছিল। মুখটা অস্পষ্ট, কিন্তু ঠোঁটদুটো নড়ছে। রুহি ভয় আর বিস্ময়ে পেছনে তাকায়—কেউ নেই!
আবার আয়নায় চোখ ফেরাতেই লেখাটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যেন কেউ আঙুল দিয়ে লেখা:
“আমি দেখছি তোমাকে। ভয় পেও না।”
রুহির হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। সে তাড়াতাড়ি আয়না মুছে দেয়। কিন্তু লেখাগুলো তখন আর নেই।
গোসল না করেই বেরিয়ে আসে সে। মোবাইল হাতে নেয়। নাম্বারটি আবার কল করে—তবু ফোন বন্ধ।
হঠাৎ আবার একটা মেসেজ—
"আজ বিকেল ৪টা ৪৭ মিনিটে তোমার ব্যালকনির নিচে একজন লোক দাঁড়াবে। সে তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাইবে না। শুধু একটা খাম দিয়ে চলে যাবে। খামটা একা থাকতেই খুলবে। কাউকে দেখিও না।"
রুহি ফোনের সময় দেখে, ৪টা ৩৯ বাজে। মন যেন বিশ্বাস করতে চায় না, কিন্তু ঘটনাগুলো যেভাবে ঘটছে, অস্বীকারও করতে পারে না।
সে ব্যালকনির পর্দা একটু সরিয়ে নিচে তাকায়। ৪টা ৪৭-এ ঠিক সময়মতো একটি ছেলেমানুষ দাঁড়ায় নিচে, মুখ নিচু। পরনে ধূসর শার্ট। হাতে খাম।
দরজার বেল। রুহি ধীরে ধীরে দরজা খুলে দেখে, লোকটা মুখ না তুলেই খামটি বাড়িয়ে দেয়। কথা না বলে সোজা চলে যায়।
রুহি দরজা বন্ধ করে ভেতরে আসে। খামটা একটু কাঁপা হাতে খোলে।
ভেতরে একটি চিরকুট:
"তোমাকে শুধু আমি দেখছি না, ওরাও দেখছে।
আজ রাত ১২টার মধ্যে তোমার ঘরের পশ্চিম দেয়ালের পেছনে লুকানো দরজাটা খুলে দেখো।
যদি দেরি করো, একজোড়া চোখ আর কখনো আলো দেখবে না।"
রুহির নিঃশ্বাস আটকে আসে। ওর তো ঘরের পশ্চিম দেয়ালে কোনো দরজা নেই! তাহলে?
রাতে ঘুম আসে না তার। দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকে।
রাত ১১টা ৫৮। সে ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট টর্চ বার করে ধীরে ধীরে দেয়ালের দিকে এগোয়। দেয়ালটা খালি মনে হলেও একটা কোণায় টিপে ধরতেই হালকা ঠকঠক শব্দ হয়। দেয়ালের একটা অংশ একটু ভেতরে দেবে যায়
হৃদকম্পনের মাঝে সে চাপ দেয়। একটা ছোট গোপন দরজা খুলে যায়। ভিতরে অন্ধকার।
রুহি ভেতরে ঢোকে না, শুধু টর্চটা এগিয়ে দেয়।
টর্চের আলোয় দেখা যায় ছোট একটা কাঠের বাক্স। সেটা টেনে বের করে আনতে গিয়ে সে দেখে, নিচে আরেকটা কাগজ গুঁজে রাখা।
বাক্স খুলতেই ভেতরে একগুচ্ছ পুরনো চিঠি, কিছু পছন্দের ছবি, আর... একটি ফ্ল্যাশড্রাইভ।
চিঠির প্রথমটাই রুহির নিজের নাম ধরে লেখা—
“রুহি, তুমি যাকে ভালোবাসো, সে কখনো তোমাকে ভালোবাসেনি।
যাদের বন্ধু ভেবেছ, তারা কখনোই তোমার বন্ধু ছিল না।
এই ফ্ল্যাশড্রাইভে এমন কিছু আছে, যেটা তোমার পুরো জীবন বদলে দেবে।
কিন্তু মনে রেখো—তুমি একা নও। আমি আছি। আমি সব জানি।— নীরব চোখ”
রুহি তখনও জানে না, এই ফ্ল্যাশড্রাইভে কী আছে, অথবা কে এই ‘নীরব চোখ’।
কিন্তু তার মন বলে—এটা শুধুই শুরু।
চলবে…
পর্ব ৩ লিংক
https//www.nirobcokpartsecend.com
0 Post a Comment:
Post a Comment