গল্প: হতভাগা পর্ব: ১৩ লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ

গল্প: হতভাগা

পর্ব: ১৩

লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ



শায়লা রহমান, যিনি এক সময় একটি বড় প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন, এখন দুনিয়া থেকে একপ্রকার নির্বাসিত। তার রাজনৈতিক ও আর্থিক খ্যাতি প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। কিন্তু শায়লার কাছে এখনও কিছু শেষ ত্রুটি ছিল—তিনি জানতেন, তার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক সম্পর্কগুলি তাকে রক্ষা করতে পারে। তার বিরুদ্ধে মামলাও চলছিল, তবে শায়লা নিজের ক্ষমতার শেষ নিঃশেষ করতে চায়নি। এমন একটি সময়ে, সে একটি নতুন ষড়যন্ত্রের ছক কষে।


একটি গোপন মিটিংয়ের মাধ্যমে শায়লা বিভিন্ন ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, এবং কিছু মিডিয়া ব্যক্তিত্বকে একত্রিত করে। তার পরিকল্পনা ছিল, নাদিয়া ও তার শিকড় প্রজেক্টের কর্মকাণ্ডকে সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসী সমর্থক হিসেবে তুলে ধরা। এর মাধ্যমে তার প্রজেক্টের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে এবং নাদিয়াকে তার পথ থেকে সরিয়ে ফেলা যাবে।


"আমরা যদি তার কাজের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে পারি, তাহলে তার প্রজেক্টটি পৃথিবীজুড়ে অচল হয়ে যাবে। আমাদের উপস্থাপন করা তথ্য ও প্রমাণ যদি মিথ্যা না হয়, তবে তাকে ঘিরে সৃষ্টি হবে এক বড় বিপদ," শায়লা সভায় বলছিল।


এবার শায়লা আরও একবার তার শত্রু নাদিয়ার বিরুদ্ধে চক্রান্তে মগ্ন ছিল। তবে সে জানত, এবার আগের মতো সহজ হবে না।




নাদিয়া জানত, শায়লা হারলেও তার ষড়যন্ত্র থামবে না। নাদিয়া নিজেকে প্রস্তুত রাখছিল এমন এক পরিস্থিতির জন্য, যেখানে তাকে শুধু নিজের প্রজেক্ট নয়, পুরো পৃথিবীকে রক্ষা করতে হবে। শায়লার পরিকল্পনার খবর পাওয়ার পর, নাদিয়া এবং তার দল দ্রুত একটি নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করল।


একদিন, নাদিয়া তার দলের সাথে মিটিংয়ে বলল—


“শায়লা আবার কিছু করতে চাইছে। কিন্তু আমরা জানি, তার ষড়যন্ত্রের শেষ কোথায়? আমাদের যদি জনগণের বিশ্বাস অর্জন করতে হয়, তাহলে আমাদের আরও বেশি সতর্ক এবং সংগঠিত হতে হবে। শিকড় প্রজেক্ট শুধুমাত্র একটি প্রজেক্ট নয়, এটি এখন একটি আন্দোলন। আমরা যা করছি, তার মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের কল্যাণ। এটি কখনোই কোনো ধরনের সন্ত্রাস বা সহিংসতার সাথে যুক্ত হতে পারে না।”


নাদিয়া বিশ্বাস করত, সত্যের শক্তি শেষ পর্যন্ত জিতবে। সে জানত, শায়লা যতই চেষ্টা করুক, জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্ব এবং সঠিক পথের প্রতি তাদের অবিচল বিশ্বাসই তাদের জয়ী করবে।




শায়লা যখন তার ষড়যন্ত্র চালাতে থাকে, তখন তার প্রজেক্টের বিরুদ্ধে মিডিয়া এবং জনমত তৈরি করার প্রচেষ্টা শুরু হয়। প্রথম দিকে, তার কিছু চক্রান্ত কিছুটা সফলও হয়েছিল। কিছু মিডিয়া রিপোর্ট এবং সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে শিকড় প্রজেক্টের বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ উঠতে শুরু করে। তবে শায়লার পরিকল্পনা যেমনই শক্তিশালী হোক, নাদিয়া ও তার দলের কঠোর পরিশ্রম এবং সততার কারণে, খুব দ্রুত এর প্রতিক্রিয়া পাওয়া শুরু হয়।


একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম শিকড় প্রজেক্টের সঠিক কাজের প্রমাণ পেয়ে, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে যায়। মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়—


“শিকড় প্রজেক্টের কাজ বিশ্বের এক অনন্য সামাজিক উদ্যোগ। যাদের উদ্দেশ্য মানুষের উন্নতি, শিক্ষা এবং কল্যাণ, তারা কখনোই সন্ত্রাস বা সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না।”


এতে শায়লা আরও একবার হার মানতে বাধ্য হয়। তার যেসব চক্রান্ত এবং অপপ্রচার চালানো হয়েছিল, সেগুলি জনমনে অবিশ্বাস সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়।




নাদিয়া জানত, শায়লা পুরোপুরি হারেনি, তবে তিনি যে জনগণের সমর্থন পেয়েছেন, সেটি ছিল তার বড় শক্তি। শায়লার বিপদ থেকে একধাপ এগিয়ে, নাদিয়া এবং তার দল এক নতুন পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা ঠিক করেছিল, এবার পুরো পৃথিবীতে শিকড় প্রজেক্টের কাজ আরও দৃঢ়ভাবে তুলে ধরা হবে।


নাদিয়া তার পরিকল্পনাটি দলের সদস্যদের জানাল—


“আমাদের কাজ এখন শুধু আমাদের দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমরা আরও বড় প্রজেক্ট চালু করবো—বিশ্বব্যাপী শিক্ষার ক্ষেত্রেও আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করবো। আমাদের লক্ষ্য বিশ্বজুড়ে এমন একটি উদ্যোগ গড়ে তোলা, যেখানে প্রতিটি শিশুর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে।”


তার এই বক্তব্য শিকড় প্রজেক্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি নতুন দিশা দেখিয়ে দিল। নাদিয়া জানত, এটাই তার প্রজেক্টের মূল উদ্দেশ্য। তিনি এই পৃথিবীকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং ন্যায্য সমাজ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইতেন।




শায়লা, যিনি কখনোই নিজের আত্মসম্মান হারাতে চায়নি, এবার একেবারে শেষ চক্রান্তের দিকে এগোচ্ছিল। তার পরিকল্পনা ছিল, সে কিছু শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক নেতাদের একত্রিত করে একটি নতুন গোপন জোট তৈরি করবে। এর মাধ্যমে তিনি নাদিয়ার প্রজেক্টের মূল স্তম্ভের বিরুদ্ধে কাজ করবেন।


তবে, শায়লার শেষ চক্রান্ত ছিল তার নিজের শেষ ধাপ। এই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তিনি ভাবতেন, আবার একবার নাদিয়াকে পরাজিত করতে পারবেন, কিন্তু তার অজানা ছিল, নাদিয়া যে শক্তির সঙ্গে তার দলের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে, তা কখনোই পরাজিত হবে না।


এদিকে, আরিজ শিকড় প্রজেক্টের জন্য একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠছিল। তার মেধা এবং কাজের প্রতি আগ্রহ দেখে, নাদিয়া তাকে আরও বেশি দায়িত্ব দিয়েছিল। একদিন, আরিজ তার মায়ের কাছে এসে বলল—


“মা, আমি কিছু একটা করতে চাই। শিকড় প্রজেক্টের জন্য আরও ভালো কিছু করতে চাই। আমি জানি, এই মুহূর্তে তুমি অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, কিন্তু আমি তোমার পাশে আছি। তোমার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমি সাহায্য করতে প্রস্তুত।”


নাদিয়া তার ছেলের কথা শুনে চুপচাপ কিছুক্ষণ ভেবেছিল। তারপর সে বলেছিল—


“আরিজ, তুমি যে এতো বড় কিছু করতে চাও, তা দেখে আমি গর্বিত। তবে, মনে রেখো, জীবনটা এক পথ নয়, বহু পথের সমষ্টি। তুমি যদি সত্যিকারের পরিবর্তন চাও, তোমাকে সৎভাবে কাজ করতে হবে, আর মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।”


আরিজের চোখে এক নতুন আগ্রহ দেখা দিয়েছিল। সে জানত, তার মা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তারও সেভাবে এগিয়ে যেতে হবে।


চলবে...

গল্প: হতভাগা

পর্ব: ১৩

লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ

0 Post a Comment:

Post a Comment