রম্য কাহিনী পর্ব: ৯ লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ

রম্য কাহিনী 

পর্ব: ৯ 

লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ




পরিবারের সবাই এখনও আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভ্রান্ত। কিন্তু আমি কোনো এক ঝুঁকি নিয়ে বাঁচতে চাই, নিজেকে অন্যায় ভুক্তভোগী হিসেবে ভাবতে চাই না।


বাবার সঙ্গে কথা বলার সাহস জুগিয়ে, আমি সামনে গিয়ে বললাম,

“বাবা, আমি এই সিদ্ধান্তে অনড়। আমি সেই একজনকে বিয়ে করব।”


বাবার চোখে আঘাত আর হতাশা দেখা গেল, কিন্তু তিনি আমার সিদ্ধান্তের সম্মান জানালেন,

“যেখানে তোমার মন আছে, আমি তোমার পাশে আছি।”


এই কথাগুলো শুনে আমার মনে এক অদ্ভুত শক্তি আসল। সেই দিন থেকে পরিবারের সদস্যরাও ধীরে ধীরে আমার পাশে দাঁড়াতে শুরু করল।


আর সেই ছেলেটা—তারও পরিবর্তন শুরুর দিকে। ওর চোখে আগের ঘৃণা ধীরে ধীরে গলে যেতে শুরু করল।


আমাদের জীবন এখন নতুন মোড় নিচ্ছে। এই যাত্রা কঠিন হবে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আমরা একসঙ্গে এই অন্ধকার পেরিয়ে আলো খুঁজে পাব।



দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে, আমার ও ওর মধ্যে ছোট ছোট বিশ্বাসের সেতু গড়ে উঠতে শুরু করল। সে আমাকে বোঝার চেষ্টা করছিল, আর আমি ওর মানুষের রূপ দেখতে চেয়েছিলাম।


আমাদের কথা হলো স্বচ্ছ, কোনো ছলছুদের ছায়া ছিল না। প্রতিটি দিন আমাকে নতুন শক্তি দেয়, আর তার কাছ থেকে আমি সাহস পাই।


আমার পরিবারও ধীরে ধীরে মেনে নিচ্ছে, আর বাবার চোখে সে কঠোর কড়া ছাপ কমছে। তিনি বুঝতে শুরু করেছেন, এই বিয়ে শুধু আমার জন্য নয়, আমাদের সবার জন্য একটি মুক্তির গল্প।


আমি জানি, ভবিষ্যতে অনেক বাধা আসবে, কিন্তু এখন আমার ভেতরে এক আশার আলোকিত স্রোত বইছে।


আমি আর ভয়ে নড়ব না, আর বাঁচব নিজের মতো করে।


আমাদের গল্পের এই অধ্যায় যেন হয় বিশ্বাসের জয়।



আমাদের সম্পর্কের পথে বাধা কমেনি, তবে এখন আমরা একসঙ্গে। তার চোখে আমি পেয়েছি সেই শক্তি যা আমাকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।


পরিবারের মাঝে কিছু বিরোধ এখনো রয়ে গেছে, কিন্তু তাদের রাগের পেছনে আমাকে বোঝার ইচ্ছাও লুকিয়ে আছে।


আমাদের প্রতিদিনের সংগ্রাম নতুন করে আমাকে শিখিয়েছে — যুদ্ধে জেতার জন্য দরকার ধৈর্য আর সাহস।


আমি জানি, আগামী দিনগুলো কঠিন হবে, কিন্তু আমি ভয় পাই না। কারণ আমার পাশে আছে মানুষটি, যাকে আমি বিয়ে করতে চাই।


আমাদের প্রেম শুধু একটা সম্পর্ক নয়, এটা একটি যুদ্ধে জয়ী হওয়ার গল্প।




আজ সেই দিন যখন আমি মুক্তির গান গাইতে পারছি। যন্ত্রণার আঁধার পেছনে ফেলে, সামনে দেখতে পাচ্ছি নতুন এক জীবনের আলো।


আমার বিয়েটা শুধু আমার জন্য নয়, এটা আমার স্বাধীনতার প্রতীক। সে ছেলেটার সঙ্গে আমার সম্পর্ক নতুন করে গড়ে উঠেছে — বিশ্বাস আর ভালোবাসায় ভরা।


আমার পরিবার ধীরে ধীরে আমাকে বুঝতে শিখেছে, আর আমি তাদেরও ক্ষমা করেছি।


যারা আমাকে দাগিয়েছিল, তাদের সঙ্গে আমার যুদ্ধ শেষ হয়নি, তবে আমি আর তাদের ভয় পাই না। কারণ আমার ভিতরে আছে অবিচল দৃঢ়তা।


আমি জানি, জীবনের পথে অনেক বাঁক আছে, কিন্তু আমি সেই বাঁকে বাঁকে দাঁড়িয়ে থাকব, নিজের অস্তিত্বের জন্য লড়ব।


এই গল্পের শেষে আমি শুধু বলব — আমি বেঁচে আছি, স্বাধীন, শক্তিশালী এবং নিজের নিয়ন্ত্রণে।


**গল্প শেষ**



রম্য কাহিনী পর্ব: ৮ লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ

রম্য কাহিনী

পর্ব: ৮ 

লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ



অন্ধকার সেই দিনগুলো একদম কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। আমার মনে ভাঙন ধরেছে, আর সে ফাটল বাড়ছে প্রতিনিয়ত। পরিবারের কেউ কেউ আমার সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে চায় না, কেউ আবার আমাকে ডরাতে চেষ্টা করে। বাবার চোখে ক্লান্তির ছাপ, মায়ের কাঁদার আড়ালে বেদনার ঢেউ, আর ভাইয়ের চুপচাপ চাহনি সব আমাকে ব্যাথিত করে।


রাফির সঙ্গে আমার সম্পর্কও এখন আগের মতো আর নেই। ওর গর্ব আর আমার গৌরব—দুটোরই মধ্যেই ফাটল। ও বলছে, “তুমি বুঝছো না, তোমার এই সিদ্ধান্ত শুধু তোমার নয়, পুরো পরিবারের জীবন বদলে দিচ্ছে।”


আমি বললাম, “তোমারাও কি বুঝবে? আমি এই বিয়ে শুধু আমার জন্য নই, এটা আমার পুঁজি, আমার অস্তিত্ব।”


আমার ভেতরে একটা লড়াই চলছে, একদিকে আমার মন যা চাইছে, অন্যদিকে বাস্তবের কঠিন দেওয়াল। আমি বুঝতে পারি, এই ফাটল যদি না মেরামত করি, তাহলে সবকিছু ভেঙে পড়বে।


একদিন সন্ধ্যায়, আমি একা বসে ছিলাম আমার পুরনো ঘরটার বারান্দায়। বাতাসে একটা মৃদু শীতলতা, আর আকাশে গোধূলির রং মিশে গেছে। সেই সময়ই আমার মোবাইল বেজে উঠল। কলটা রাফির। ভেতর থেকে একটা কাঁটা বেয়ে গেল। আমি রিসিভ করলাম।


“আমরা কথা বলি, ঠিকঠাক,” ও বলল। “তোমার সঙ্গে একটা দরকারি কথা আছে।”


“ঠিক আছে,” আমি বললাম, “আসো দেখা করি।”


আমি জানতাম, ওর কথাগুলো সহজ হবে না, কিন্তু জানতেও চাইছিলাম। কারণ, হয়তো এই ফাটল মেরামত হওয়ার একমাত্র সুযোগ।




রাফির কণ্ঠ ছিল কঠিন, কিন্তু ভেতর থেকে যেন একটা ঝিঁঝিঁর সুর ছুঁটে আসছিল। আমরা দুইজনই সেই ছোট্ট কফি শপে বসেছিলাম, যেখানে কতদিন আগেও আমরা একসঙ্গে স্বপ্ন গড়তাম। আজ সেই স্বপ্ন গুঁড়িয়ে গেছে, তার ভিতরে শুধু প্রশ্ন আর সন্দেহ।


“তুমি জানো, আমি তোমাকে কেন এত ত্যাগ করতে বলছি?” রাফি চোখের দিকে তাকিয়ে বলল।


আমি গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে বললাম, “না, জানি না।”


“কারণ, তুমি নিজের জন্যই লড়ছো, শুধু নিজের জন্য। কিন্তু তুমি কি বুঝছো, এই লড়াই তোমার চারপাশের মানুষদের জীবনেও কতটা প্রভাব ফেলে?”


আমি চুপ করে রাফির কথা শুনতে লাগলাম। ওর কথায় এমন এক ব্যথা মিশে ছিল, যা আমি এতদিন বুঝিনি।


“আমি চাইনি তোমাকে হারাতে,” ও বলল। “কিন্তু আমরা যদি একসঙ্গে না দাঁড়াই, তাহলে কেউই বাঁচতে পারবে না।”


আমার চোখে পানি এসে গেল। আমি কাঁদছিলাম, আর সেই কাঁদায় ছিল ঘৃণা, ভালোবাসা, ব্যথা সবকিছু মিশ্রিত। “আমি তোমাকে শুধু আমার স্বপ্নের জন্য নয়, আমার বাঁচার জন্যও চাই,” আমি বললাম।


আমরা দুইজনই বুঝেছিলাম, এই মুহূর্তটা আমাদের সম্পর্কের নতুন সূচনা হতে পারে। ব্যথার মাঝেও এক ধরনের আশা জাগছে।


বাইরের আকাশে তখন মেঘ ঘনিয়ে আসছিল, ঠিক যেন আমাদের জীবনের অন্ধকারের পর প্রভাতের অপেক্ষা।




রাফির কথা মনে মনে ঘুরে ফিরে বাজছিল, যেন কোনো অজানা সুর। কফি শপ থেকে বের হয়ে আমি শহরের ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম। মনটা ছিল অস্থির, চোখে মেঘের মতো ঘোর কাঁপছিল।


যতই চেষ্টা করি নিজেকে বুঝাতে, কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলাম, কেন আমি তাদের একজনের সাথে বিয়ে করতে চাই, হৃদয় কাঁপতেই থাকল।


আমার মনের গভীরে লুকানো একটা অন্ধকার আলো জ্বলে উঠেছিল—ব্যথা আর আশা একসঙ্গে গড়ে তোলে এক নতুন জ্যোতি।


আমি জানতাম, এই বিয়ে আমার জন্য শুধু ব্যক্তিগত লড়াই নয়, আমার পরিবারের জন্যও এক দৃষ্টান্ত। এটা ছিল আমার সম্মানের লড়াই, রক্তাক্ত হলেও।


এক হাতে আমার বাবার হাত ছুঁই, আর অন্য হাতে সেই ছেলের নাম বারবার মনে পড়ছিল, যার সাথে আমি বিয়ে করতে চাই। সে যেই হোক, আমার জীবনের অন্ধকারে একদম আলোর রেখা।


আমার আত্মবিশ্বাস আরও শক্ত হলো, আমার পথ অন্ধকার হলেও, আমি হার মানব না।


আগামী দিনগুলো আরও কঠিন হবে, কিন্তু আমি প্রস্তুত।


চলবে...



রম্য কাহিনী পর্ব: ৭ লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ

 




রম্য কাহিনী

পর্ব: ৭
লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ

সকাল ৯টা ৩৪ মিনিট।
এক কাপ গরম কফির ধোঁয়া হালকা করে জানালার দিকে উড়ে যাচ্ছিলো।
কিন্তু আমার ভিতরের আতঙ্ক ঠিক সেই ধোঁয়ার মতো করে ছড়িয়ে পড়ছিলো…
সেই অজানা নম্বরের ফোন কল—
আর তার মধ্যে লুকানো হুমকি যেন আমার বুকের মধ্যে এক বিষাক্ত কাঁটা গেঁথে রেখেছে।

আমি রাফিকে জানাইনি কিছু।
জানালেই সে ভেঙে পড়বে, আবার নিজেকে অপরাধী ভাবতে শুরু করবে।
আমি জানি, ও এখনো নিজের জন্য ক্ষমা করে উঠতে পারেনি।

দুপুরের দিকে পুলিশ এসে আমাদের বাসায় গেল।
তদন্ত শুরু হয়েছে, তবে নতুন কোনো ক্লু মেলেনি।
কিন্তু এরপর থেকে প্রতিদিনই একটা না একটা আজব ঘটনা ঘটতে লাগলো।

  • কারেন্ট চলে যায় শুধু আমাদের বাড়িতে।

  • অচেনা লোকজন দেয়ালের নিচে দাঁড়িয়ে থেকে চলে যায়।

  • প্রতিদিন দরজায় প্যাকেট পড়ে থাকে— কখনো মেয়েলি জামা, কখনো পুড়ানো ছবি, কখনো রক্তমাখা পুতুল!

মা আর দিদি তো আতঙ্কে নাওয়া খাওয়া ভুলে গেছে।
বাবা নিজে থানায় গিয়েছিলেন— কিন্তু পুলিশ বলছে কোনো প্রমাণ নেই, তাই কিছু করা যাচ্ছে না।
বাবা ফেরার সময় শুধু বলেছিলেন—
“এই সমাজে নারী শক্তি বলে কিছু নেই রম্য। তুমি একা এক সংগ্রামে নেমেছো— শুধু সাহস নয়, এখন বুদ্ধিরও পরীক্ষা।”

রাত ১১টা।

হঠাৎ একটা শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো।
জানালার কাঁচ ভাঙার মতো শব্দ!

চোখ মেলে দেখলাম জানালার কাঁচ ভেঙে ঘরের ভেতর একটা কাগজ পড়ে আছে।

দৌড়ে গিয়ে সেটা হাতে নিলাম—
লাল রঙে লেখা:

"তোমার শুদ্ধতার নাটক বন্ধ করো। না হলে ইতিহাস আবারও ফিরে আসবে— এবার আর কেউ তোমার পাশে দাঁড়াবে না।"

পরদিন সকালে থানায় গিয়ে এসআই ফারহানাকে চিঠিটা দেখালাম।
উনি সেটা হাতে নিয়ে গম্ভীর হয়ে পড়লেন।

“এটা নিছক ভয় দেখানোর চেষ্টা না, এই চিঠিতে একটা গন্ধ আছে রম্য।”

আমি অবাক হয়ে বললাম—
“কোন গন্ধ?”

উনি বললেন—
“চিঠির কাগজটা দামী, এই রকম কাগজ সাধারণত অভিজাত ঘরের কেউ ব্যবহার করে। আর কালি? এই কালি সরকার অনুমোদিত কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোথাও পাওয়া যায় না।”

আমি বললাম—
“মানে, ওরা এখনো সমাজের অভিজাত গোষ্ঠীর ভিতরে লুকিয়ে আছে?”

উনি বললেন—
“সম্ভব। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— কেউ তোমার চারপাশে আছে, যিনি তোমার সবকিছু জানে।”

আমি চমকে উঠলাম।

বাড়ি ফিরে আসতেই মা বললো—
“আজ সকালে রাফি এসেছিল। তোমার খোঁজ নিয়েছে, কিন্তু তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা— সেটা বারবার জানতে চাইছিলো।”

আমি চুপ করে গেলাম।
রাফি এখনো জানে না আমি হুমকি পাচ্ছি।
আমি তাকে এই যুদ্ধের অংশ করতে চাই না, কিন্তু সেই ছায়া আমাকে যেন ছাড়ছে না।

সন্ধ্যায় রাফির বাসায় গেলাম।

ও আমাকে দেখে হকচকিয়ে গেলো।

“তুমি! এই সময়?”

আমি বললাম—
“আমাকে কিছু কথা বলতেই হবে রাফি। এই যুদ্ধে তুমি চাইলেও আলাদা থাকতে পারবে না। কারণ ‘ওরা’ ফিরে এসেছে।”

ও হতভম্ব হয়ে গেলো।

আমি সবটা বললাম— অজানা নম্বর, হুমকির চিঠি, কাঁচ ভাঙা, রাতের ছায়া, সব কিছু।

রাফি মাথা নিচু করে বসে রইলো কিছুক্ষণ।

তারপর বললো—

“আমি জানি, আমার আগে যা করেছি— তার কোনো ক্ষমা নেই। কিন্তু এখন যদি তুমি আমাকে পাশে থাকতে দাও, আমি অন্তত একজন পাহারাদার হতে পারি। আমি এখনো যুদ্ধ করতে শিখিনি রম্য, কিন্তু তোমার জন্য লড়তে চাই। এইবার আমাকে তোমার পাশে দাঁড়াতে দাও।"

আমি চুপ করে রইলাম।
কিন্তু মনে মনে ঠিক করলাম—
এইবার আমি আর পালিয়ে যাবো না।

এইবার শুধু "ক্ষমা" দিয়ে শেষ করবো না।
এইবার বিচার করবো। শাস্তি নিশ্চিত করবো।
কারণ আমি শুধু একজন ধর্ষণের শিকার নারী নই,
আমি একজন যোদ্ধা। আমি রম্য।




আমার মনের ভেতর এক অসহ্য অন্ধকার বাসা বাঁধছে। প্রত্যেক মুহূর্তে মনে হচ্ছে যেনো গা ঘেঁষে বসে আছে ভয় আর সন্দেহ। বাবার কথা, পরিবারের প্রশ্ন আর সেই সাতজনের চেহারা বার বার চোখে ভেসে ওঠে। আমি জানি, এ পথে হেঁটে ফিরে আসা সহজ হবে না।

রাফি আমার জীবনে হঠাৎ ঝড়ের মত ঢুকে পড়েছে। ওর রাগ আর গোপনীয়তা আমাকে বার বার বিভ্রান্ত করে। ওর চোখের সেই তীব্রতা যেনো আমার প্রতি এক ধরনের দ্বৈত প্রেম এবং ঘৃনার মিশ্রণ। ও যখন কাছে আসে, তখন আমার হারানো নিরাপত্তার খোঁজ পাই। কিন্তু যখন ও দূরে সরে যায়, তখন আমার ভয় আবার ফিরে আসে।

আমার বাবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক এখন যেনো ক্রন্দনের ধারায় ভেসে যাচ্ছে। উনি আমার জন্য সব করতে চায়, কিন্তু আমার সিদ্ধান্তগুলোকে স্বীকার করে নিতে পারছেন না। আমি জানি, উনি চান আমার জীবনে শান্তি হোক। কিন্তু শান্তি পেতে গেলে আমাকে প্রথমে আমার অন্ধকারের মুখোমুখি হতে হবে।

একদিন বিকালে, আমি রাফির সঙ্গে শহরের এক ছোট কফি শপে বসেছিলাম। ও ধীরে ধীরে বললো, “তুমি জানো, আমি কেনো এ জগতে এত রাগে আবদ্ধ?” আমি চুপ করে ছিলাম। ও বললো, “আমার জীবনও তোমার মতোই অন্ধকারে ভরা। আমি চাই তোমাকে বাঁচাতে, কিন্তু জানি না নিজের থেকে বাঁচাতে পারব কিনা।”

আমি ওর হাতে হাত রাখলাম। প্রথমবারের মতো অনুভব করলাম, আমরা দুজনই এক রকম নিঃসঙ্গ, কিন্তু একই রকম শক্তিশালী। এই শক্তি যদি একসাথে হয়ে দাঁড়াতে পারে, তাহলে হয়তো আমরা অন্ধকারকে হারাতে পারবো।

কিন্তু এই আশা কি সত্যিই মিশন সম্ভব? আমার মাথায় হাজার প্রশ্ন ঘুরছে। ওদের সাতজন, আমার পরিবার, আমার নিজের মন – সবকিছু যেনো যুদ্ধক্ষেত্র।

চলবে...



রম্য কাহিনী পর্ব: ৬ লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ

  

রম্য কাহিনী

পর্ব: ৬

লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ





জেলের সেই ছোট্ট রুমে রাফির চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ।

সে কিছু বলেনি, আমিও না।

শুধু নিঃশব্দে আমাদের দু’জনার চোখে যেন ঝড় বয়ে চলেছে—

সে ঝড়ের নাম **অপরাধবোধ** আর **অবিচারের অভিমান**।


সে বললো না— “ক্ষমা করো।”

আমি বললাম না— “তুমি দোষী।”

তবুও অনুভব করলাম, **সেই নীরবতা অনেক কিছু বলে দিলো**।



বাড়ি ফিরে বাবা কিছু বলেননি।

মা চোখের সামনে এসে দাঁড়িয়ে শুধু বললেন—

“তুমি কি সত্যি… ওকে বিয়ে করতে চাও?”

আমি মাথা নিচু করে বললাম—

“জানি মা, কথাটা পাপের মতো শোনায়।

কিন্তু… আমি তো অন্য কাউকে কল্পনাও করতে পারি না এখন।”


মা চোখ মুছলেন।


"সে তোমার সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে রম্য…!"


আমি বললাম—

"আর সেই ক্ষতির ভার নিয়েই সে পুড়ছে এখন।

আমার মনে হয়, জীবনের সবচেয়ে কঠিন শাস্তি সে পেয়েছে—

**নিজেকে ক্ষমা করতে না পারা।**

আর আমি যদি ওকে ঘৃণা করেই যাই, তাহলে তো ওর মধ্যে ভালো কিছুর জন্মই হবে না, মা।

তাহলে কি লাভ?"



পরদিন সকালেই বিষয়টা জানাজানি হয়ে যায়।

মিডিয়া, প্রতিবেশী, আত্মীয়—

সবাই আমাদের বাড়ির সামনে ভিড় করতে লাগলো।


বাবার মুখে একটাও কথা নেই।

একটা মুহূর্তে মনে হলো, বাবা আমাকে ত্যাগ করে দেবেন।

কিন্তু হঠাৎ সবাইকে চমকে দিয়ে বাবা ডেকে বললেন—


"আমার মেয়ে যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা তার ব্যক্তিগত।

আমরা বিচারক না।

আর আমি যদি আজ তাকে ত্যাগ করি, তাহলে আমি তার সেই শক্তির উৎসটাই ভেঙে ফেলবো যেটা ওকে আবার বাঁচতে শিখিয়েছে।"




সেদিন বাবা আমার জন্য প্রথমবারের মতো দাঁড়ালেন সমাজের বিরুদ্ধে।


সবার মুখ থ মেরে গেলো।




কিন্তু… সমস্যা তো এত সহজে শেষ হয় না!


রাফি এখনও জেলে।

তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় জামিন পেতে হবে।

আমার পরিবার থেকে একটা আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হলো।

বেশ কয়েকটা শুনানি চললো।

জজ সাহেব কিছুটা অবাক, কিছুটা সংশয়ে বললেন—


“এই দেশে এমন উদাহরণ নেই।

একজন ধর্ষিতা তার ধর্ষকের জন্য জামিন আবেদন করছে! এটা তো সমাজের চোখে অন্যরকম বার্তা।”


আমি বললাম—

**“সমাজ যদি ভালো দিকটা দেখতে না পারে, তাহলে আমার কিছু করার নেই।

আমি শুধু একটা মানবিকতার গল্প লিখতে চাই, যার শেষটা হোক আলোর দিকে।”**



**আদালত রায় দিলো:**


**রাফি জামিন পাবে— তবে কয়েকটি কঠোর শর্তে:**


১. সে সামাজিক পুনর্বাসন কার্যক্রমে অংশ নেবে।

২. সরকার অনুমোদিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকবে ছয় মাস।

৩. আদালতের নির্দেশ ছাড়া দেশ ত্যাগ করতে পারবে না।


আমি এই রায় শুনে চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললাম।

এ যেন বিজয়ের না হলেও, **বাঁচার অধিকার ফিরে পাওয়ার এক ঘোষণা**।



শেষ রাতে মা এসে বললেন—

“তুই কি সত্যি বিশ্বাস করিস, রাফি তোকে ভালোবাসে?”


আমি বললাম—

“মা, ভালোবাসা সব সময় ফুল, ক্যান্ডি, প্রেমপত্র না…

কখনো কখনো তা **পশ্চাৎপটে দাঁড়িয়ে, নিজের শাস্তি নিজে ভোগ করার নামও।**”


মা আর কিছু বলেননি।

শুধু কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে চলে গেলেন।



রাফি জামিনে মুক্তি পেলো।


ঘরভর্তি মানুষ। মিডিয়ার ক্যামেরা।

আমি চুপচাপ সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।

রাফির চোখে পানি… আর ঠোঁটে একটাই কথা—


**“তুমি নিশ্চিত? আমি তো এখনো নিজের চোখে তাকাতে পারি না…”**


আমি শুধু হাতটা বাড়িয়ে দিলাম…


আর বললাম—

**“তুমিও বাঁচো। আমিও বাঁচি।

মিলেমিশে নয়… নিজেদের সাথে মিলিয়ে, নিজেরা বাঁচি।”

রাফির জামিন হওয়ার পর পরিস্থিতি যতটা সহজ মনে হয়েছিল, বাস্তবে ততটাই জটিল হয়ে উঠলো।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে আমাদের গল্প।
প্রায় প্রতিটি নিউজ পোর্টাল শিরোনাম করেছে—
"ধর্ষিতা তার ধর্ষককে করলো ক্ষমা— বিয়ে করার ঘোষণা!"
আর সেই শিরোনামের নিচে হাজারো মন্তব্য—
“প্রপাগান্ডা”, “নাটক”, “মেয়েটা টাকার লোভে বেহায়া হয়েছে”, “ধর্ষণ নিয়ে প্রেম সম্ভব?”

আমি প্রতিটা মন্তব্য দেখছিলাম, কিন্তু ভেতরটা কেঁপে উঠছিলো না।
বরং মনে হচ্ছিল, আমি এক পরীক্ষার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে পাস বা ফেল নয়— বরং আত্মবিশ্বাসটাই চূড়ান্ত উত্তর।

বাড়ির উঠোনে সাংবাদিকদের ভিড় আর বন্ধুবান্ধবদের কৌতূহলী চোখে আমাদের পরিবারের স্বাভাবিক জীবন যেন কোথাও হারিয়ে গেছে।

বাবা মুখ বন্ধ করে রেখেছেন, কিন্তু আমি জানি, ভেতরে একটা ঝড় চলছে ওনার মধ্যে।

এক রাতে খাবার টেবিলে বাবার কথাটা স্পষ্ট শুনলাম—

"রম্য, তুমি যদি এক মুহূর্তের জন্যও মনে করো, এই সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল— তাহলে ফিরে এসো মা। ভুল সিদ্ধান্তের দাম অনেক বড় হয়।"

আমি একটু থেমে বাবার দিকে তাকালাম।

"বাবা, তুমি নিজেও জানো, আমি সিদ্ধান্ত নিইনি হঠাৎ করে।
আমি নিজেকে ধ্বংস হতে না দিয়ে, এক অপরাধীকে পরিবর্তনের সুযোগ দিতে চেয়েছি। এটাই আমার প্রতিবাদ, এটাই আমার প্রতিশোধ।"

বাবা এবার আর কিছু বললেন না।
শুধু চুপচাপ উঠে গেলেন।

এদিকে রাফির জীবনও স্বাভাবিক না।

বাড়ি ফিরেছে ঠিকই, কিন্তু তার নিজের পরিবারও তাকে পুরোপুরি মেনে নেয়নি।
তার মা-ও তাকে একরকম দূরে সরিয়ে রেখেছেন।
একমাত্র ছোট বোনটাই পাশে দাঁড়িয়েছে।

রাফি এখন এক সরকারি পুনর্বাসন প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছে।
প্রতিদিন সমাজসেবামূলক কাজে অংশ নেয়, রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা, শিশুদের পড়ানো—
আর প্রতি সপ্তাহে কাউন্সেলিং সেশনে যেতে হয়।

সে প্রতিদিন একটা ডায়েরি লেখে—
আমার অপরাধ, আমার অনুশোচনা, আমার নতুন জীবন।

একদিন বিকেলে আমি তাকে দেখতে গিয়েছিলাম।

সে আমাকে একটা চায়ের দোকানে নিয়ে গেলো।
আমরা দু’জন সাধারণ মানুষের মতো বসলাম, প্রথমবারের মতো।

সে বললো—
"তুমি কি জানো রম্য, আমি আজকাল ঘুমাতে পারি। কারণ তুমি আমাকে দুঃস্বপ্নে থেকেও আলোর একটা পথ দেখিয়েছো।"

আমি বললাম—
"আমি চাই তুমি বদলে যাও রাফি। আমি চাই, তুমি নিজেকে এমন এক মানুষ বানাও, যাতে অন্য এক রাফির মতো কেউ আর কোনোদিন সেই ভুলটা না করে।"

রাফি কিছু না বলে মাথা নিচু করলো।

কিন্তু... গল্প এখানেই শেষ হয় না।

সেই রাতে একটা ফোন এলো।
অজানা নাম্বার।
আমি ধরলাম।

ওপাশ থেকে একটা ভয়ানক ঠান্ডা কণ্ঠ বললো—

"ভুল করেছো রম্য। রাফি শুধু একজন ছিলো। কিন্তু আমরা তো ছিলাম সাতজন। আর তোমার সেই ‘ক্ষমা’ আমাদের জন্য নয়… আমরা ভুলিনি।"

মাথার ভেতর বাজ পড়ে গেলো।
হাত ঠান্ডা হয়ে এলো।

আমি ফোন রেখে দিলাম।
কিছু বলিনি কাউকে।
শুধু জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।

আকাশে আবার সেই লাল নীলিমা।
কিন্তু এবার বাতাসে অজানা শীতলতা।

পরদিন সকালেই থানায় গেলাম।
এসআই ফারহানা বেগম আমাকে চিনতেন।
আমি বললাম—
"আমার সন্দেহ, ওরা ফিরে এসেছে। বাকি ছয়জন।"

তিনি চোখ সরু করে জিজ্ঞেস করলেন—
"আপনার কাছে কোনো প্রমাণ আছে?"

আমি বললাম—
"না। কিন্তু আমি ওদের ভয় পাই না।
আমি শুধু চাই, এদের খুঁজে বের করা হোক। আমি আইনি পথে লড়বো।"

চলবে…


রম্য কাহিনী পর্ব: ৫ লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ





রম্য কাহিনী

পর্ব: ৫

লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ


এক বৃষ্টিভেজা সকাল।

চায়ের কাপ হাতে বারান্দায় বসে ছিলাম।

হঠাৎ বাড়ির দারোয়ান এসে বলল—

— “ম্যাডাম, আপনার নামে একটা চিঠি এসেছে। জেল থেকে পাঠানো।”


আমার বুক ধক করে উঠলো।

চিঠি? জেল থেকে? কে পাঠাবে?


খামের উপর স্পষ্ট লেখা—

**প্রাপক: রম্য রহমান**

**প্রেরক: রাফি খান, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার।**


তাড়াতাড়ি ঘরে এসে দরজা বন্ধ করলাম।

চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলাম।


---


**"রম্য,**


আমি জানি, তোমার কাছে আমি পশুর চেয়েও নিচু।

তোমার চোখে আমি একজন ধর্ষক।

তুমি ঘৃণা করো আমাকে— এটা জানি।


কিন্তু আমি শুধু একটা কথা বলতে চাই—

আমি তোমাকে কখনও ছুঁইনি।


তুমি যেদিন আমাদের চোখে পড়েছিলে, আমি রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম।

আমার বন্ধুদের নিষেধ করেছিলাম।

কিন্তু ওরা শোনেনি।


আমি ভেতরে ভেতরে ছটফট করছিলাম।

তবে ভয় পেয়েছিলাম, ওদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে।

আমার দুর্বলতা…

আমার চুপ করে থাকা…

আমার না বলার সাহস না থাকা— সেটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় অপরাধ।


তোমার সাথে যা হয়েছিল, তার পরে আমি নিজেকে আর ক্ষমা করতে পারিনি।

তাই আমি স্বেচ্ছায় আদালতে সব বলেছি।

নিজের দোষ মেনেও নিয়েছি, কারণ আমার নীরবতা তো আরেকটা অপরাধ।


তোমার সাহস দেখে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম রম্য।

তুমি তো আমাদের চেয়ে অনেক বড়।

তুমি সাহস দেখালে।

আমি দেখাতে পারিনি।


আমি জানি, এই চিঠি পড়ে তুমি আমাকে ক্ষমা করবে না।

তবে আমার অন্তরের যন্ত্রণা যদি এক ফোঁটাও তোমার ভার হালকা করে— তাহলেই আমার শান্তি।


রাফি"\*\*


---


চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিলো।

চিঠিটা বুকের কাছে চেপে ধরলাম।


এখনও বুঝতে পারছি না—

আমি ওকে ঘৃণা করবো, না করুণা?


সে কি সত্যিই অপরাধী?

নাকি সময়ের চাপে নীরব থেকে আরেক অপরাধী হয়ে উঠেছিল?




**সন্ধ্যা নামতেই বাবার কাছে চিঠিটা দেখালাম।**

তিনি চুপ করে অনেকক্ষণ পড়ে রইলেন।

তারপর ধীরে বললেন—

— “এই চিঠি প্রমাণ করে, দোষী শুধু যে হাতে আঘাত করে, সে নয়… যে চোখ ফিরিয়ে নেয়, সে-ও সমান অপরাধী। কিন্তু হয়তো redemption এখনও সম্ভব…”


আমি কিছু বললাম না।


কিন্তু সেই রাতে…

চোখ বন্ধ করতেই বারবার একটা দৃশ্য ভেসে উঠলো—

**রাফির চোখ…**

সেদিনের সেই তীব্র দৃষ্টির বদলে আজ শুধু অনুশোচনা আর গ্লানি।



রাফির চিঠির পর সেই রাতে এক ফোঁটাও ঘুমাতে পারিনি।

মনের ভেতর একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে—

আমি কী বিশ্বাস করবো ওর বলা কথা?

নাকি এটাও একটা সাজানো নাটক?


সকালে বাবা চুপচাপ আমার ঘরে এলেন।

একটা কাগজ আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন—

“এইটা রাফির প্রোফাইল… আমি নিজে খোঁজ নিয়ে এনেছি।”


##


**রাফি খান**

জন্ম : পুরান ঢাকা

বাবা ছিলেন একসময় নামকরা সাংবাদিক।

মা কলেজের অধ্যাপিকা।

কিন্তু রাফি যখন ক্লাস টেন, তখন বাবা মারা যান এক সড়ক দুর্ঘটনায়।

মা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

রাফির পড়াশোনা থেমে যায়, আর সেই সময় থেকেই সে মিশতে শুরু করে “ভাইয়ের গ্রুপে”।

প্রথমে টাকার লোভে, পরে নিজের অবস্থান রক্ষায়।


ধীরে ধীরে সে হয়ে ওঠে এক ‘ফ্রন্ট লাইন প্লেয়ার’।

চোখে-মুখে চিন্তা কম, কিন্তু ভেতরে লুকানো বুদ্ধিমত্তা ছিল প্রচুর।


সেই গ্রুপের সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনাটাই ঘটলো আমার সাথে।

আর সেই ঘটনায় রাফির ভূমিকা ছিল— **“নীরব দর্শক”**।




আমি ভেবেছিলাম, ওদের একজনেরও মন গলে না…

কিন্তু রাফির এই চিঠি, তার অতীত আর পুলিশের দেওয়া তথ্যে দেখলাম—

সে ঘটনার পর থেকে সে অনেক কেঁদেছে।

অনেকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছে।

এমনকি পুলিশ কাস্টডিতে থাকা অবস্থায় একবার গলায় ব্লেড চালাতে গিয়েছিল।


তবে ও কি সত্যিই **ততটাই ভালো**?


না কি নিজেকে বাঁচানোর জন্য এসব অভিনয়?




সন্ধ্যাবেলা মা এসে বললেন—

“তুমি যদি চাও, আমরা রাফিকে জেলেই রাখবো। চিরদিন। চাইলে বিদেশে পাঠিয়ে দেই তোমাকে।”

আমি শুধু একটাই কথা বললাম—

**“আমি ওকে একবার দেখতে চাই…”**


সবাই থমকে গেলো।


মা চুপ।

বাবার চোখে শঙ্কা।

ভাইয়া কাঁপা গলায় বলল—

“তুই ঠিক করিস? যে তোকে…!”


আমি ঠাণ্ডা গলায় উত্তর দিলাম—

“যে আমাকে ছুঁয়েও দেখেনি, কিন্তু চুপ থেকেছে… আমি শুধু জানতে চাই কেনো। একবার… একবার মুখোমুখি হলে বুঝতে পারবো।”




**শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো, আমি রাফিকে দেখতে যাবো।**


**ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার।**


জেল গেটের সামনেই বুক ধড়ফড় করছিল।

নাম রেজিস্টারে সই করে, স্ক্যানিং পেরিয়ে একটা ছোট রুমে বসিয়ে দেওয়া হলো আমাকে।


পাঁচ মিনিট পর, পুলিশি পাহারায় ঢুকলো রাফি।


চোখে ক্লান্তি, মুখে দাড়ি-গোঁফ।

আমার দিকে তাকিয়েই মাথা নিচু করে ফেললো।


আমি ধীরে বললাম—


**“তুমি কি সত্যিই কিছু করোনি?…”**


সে চোখ তুলে তাকালো আমার দিকে।

তার চোখে এখন ভয় নেই, লোভ নেই, শুধু—


**আত্মগ্লানি।**


সে কাঁপা গলায় বললো—

“আমি তোদের থামাতে পারিনি।

তাই তো নিজেকে মানুষ মনে হয় না।

তুই যদি বলিস, আমি এখানেই মরে যাবো।”


আমার বুকটা ধক করে উঠলো।


আর কিছু বললাম না।

চোখ দুটো শুধু টলমল করে উঠলো…

এই প্রথম, আমি ধর্ষকের চোখে দেখলাম **পশুত্ব নয়, পাষাণ বেদনা।**




**চলবে…**



৬ষ্ঠ পর্ব লিংক 

httpswww.sixppartrosomy.com

রম্য কাহিনী পর্ব: ৪ লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ

 




রম্য কাহিনী

পর্ব: ৪

লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ


আমি ঠিক করেছিলাম— এবার আর চুপ থাকবো না। সমাজের ভয়ে নয়, পরিবারের ‘সম্মান’ রক্ষার ভয়ে নয়, নিজের ভিতরের ভয়কেই আজকে আমি চিরতরে গলা টিপে মারব।

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি বাবা চুপচাপ বসে আছেন। চোখের কোণে অঘোষিত উদ্বেগের ছাপ।

আমি নিচে নেমে এলাম। হাতে একটা পেনড্রাইভ।


— "বাবা, আজকে একটা জিনিস তোমাকে দেখাতে চাই।"


তিনি চমকে তাকালেন আমার দিকে।

আমি কোনো কথা না বলে ল্যাপটপ খুলে পেনড্রাইভ ঢুকালাম।

ওপরে ভেসে উঠল একটি ভিডিওর নাম:

**"স্বীকারোক্তি – রাফি"**


চলতে শুরু করল ভিডিও। রাফির স্বর, চেহারা, ভঙ্গি— সব কিছুই ধরা পড়েছে ক্যামেরায়।

এক এক করে সে বলছে সাত ধর্ষকের নাম, প্রতিটির ভূমিকা, পরিকল্পনার বিবরণ।

ভিডিও শেষ হতেই ঘরে নেমে এলো নিস্তব্ধতা।


বাবার মুখে গভীর ঘৃণা, কিন্তু সঙ্গে এক অপার বিস্ময়।

— "এই ভিডিওটা তুমি করেছো?"

আমি মাথা নেড়ে বললাম,

— "হ্যাঁ, বাবা। এবং আমি এটা আজ দুপুরেই সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করবো।"


বাবা কিছু বললেন না। শুধু ধীরে ধীরে উঠে গিয়ে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন—

— "আজ বুঝলাম, তুই শুধু আমার মেয়ে না… তুই একজন যোদ্ধা।"



দুপুর ১২টা।

ঢাকার একটি নামি হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলন।

প্রায় সব নামী টিভি চ্যানেল, অনলাইন পোর্টাল উপস্থিত।

আমি সাদা সালোয়ার কামিজ পরে স্টেজে উঠলাম।

পেছনে আমার বাবা।

মাইক্রোফোনে মুখ আনতেই পুরো হল নিঃশব্দ।


আমি বললাম:

— "আমি এক ধর্ষণকাণ্ডের ভিকটিম। আমাকে সাতজন মিলে ধর্ষণ করেছিলো। আজ তাদের একজন— রাফি— তার অপরাধ স্বীকার করেছে। আমি তা রেকর্ড করেছি। আমি এই ভিডিও আজ আপনাদের সামনে প্রকাশ করছি যাতে আর কোনো মেয়ে ন্যায়ের জন্য ভীত না থাকে।"


তারপর ভিডিও চলতে শুরু করল।

সবার চোখ ফাঁক হয়ে গেল।

রাফির মুখ, তার স্বীকারোক্তি, পরিকল্পনার বিবরণ— সবকিছু ধরা পড়ল।



বাংলাদেশের প্রতিটি সংবাদপত্রের হেডলাইন:

**"ধর্ষকের স্বীকারোক্তি: এক সাহসী মেয়ের লড়াই"**

**"রম্য কাহিনী নয়, এ এক রক্তাক্ত বাস্তবতা"**

**"রাফি ও তার ছয় সহযোগী গ্রেপ্তার চেষ্টায় পুলিশ"**


ওই দিন রাতেই রাশেদ পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে বিমানবন্দরে।

জুবায়ের গা ঢাকা দেয়, বাকিদের বিরুদ্ধে রেড জারি হয়।

রাফি নিজেই থানায় আত্মসমর্পণ করে।



তবে এই কাহিনী এখানেই শেষ নয়।

রাফি যখন কোর্টে তোলে, বিচারক তাকে প্রশ্ন করেন—

— "তুমি কি বিয়েতে সম্মত হয়েছিলে নিজের ইচ্ছায়?"

সে মাথা নিচু করে বলে—

— "না। আমি জানতাম, সে আমাকে ব্যবহার করবে। এবং আমি সেটাই চেয়েছিলাম। কারণ আমি চাই তার হাতে আমার শাস্তি শুরু হোক।"


পুরো আদালত স্তব্ধ।

বিচারক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন,

— "এই কোর্ট মনে করে, এই ধর্ষণকাণ্ড শুধু একজন মেয়ের বিরুদ্ধে অপরাধ নয়, বরং গোটা সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক চরম আঘাত।"


আদালতের নির্দেশে রাফিসহ বাকিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শুরু হয়।

আর আমি?

আমি নতুনভাবে জীবন শুরু করি।

সবার সামনে, নিজের পরিচয় লুকোই না আর।

আমি গর্ব করে বলি—

**"হ্যাঁ, আমি ভিকটিম। কিন্তু এখন আমি বিজয়িনী।"


ঢাকার আদালত চত্বরে আজ জনস্রোত।
আমার মামলার শুনানি আজ।
রাফি এবং তার ছয় সহযোগী হাজির আছে আদালতের কাঠগড়ায়।
আদালত চুপ। বিচারকের কণ্ঠ স্থির, গম্ভীর—
কিন্তু তাঁর কথায় যেন বজ্রপাতের মতো কম্পন জাগে চারদিকে।

— “এই আদালত মনে করে, এই ঘটনা শুধুমাত্র একজন নারীর ওপর পাশবিকতা নয়, বরং রাষ্ট্র এবং ন্যায়বিচারের চেতনাকেই অপমান করার প্রচেষ্টা। সাতজন মিলে এক তরুণীকে অপহরণ করে ধর্ষণ করেছে— প্রমাণসহ তা প্রমাণিত। তাই…”

তিনি একটুখানি থেমে বললেন—
— “সাতজনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলো। রাফির ক্ষেত্রে… তার স্বীকারোক্তি ও সহায়তার কারণে দণ্ড কিছুটা কমানো হলো— তবে তাকে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে।”

ঘরের এক পাশে বসে থাকা আমি চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ফেললাম।
না, আমি খুশি না।
আমি শান্ত।

কারণ আমি জানি, ওরা শাস্তি পেয়েছে।
এবং সবচেয়ে বড় শাস্তি হলো—
সারা দেশ আজ ওদের নাম জানে।
কেউ মুখ লুকিয়ে বাঁচতে পারবে না।

এক মাস পর…

আজ আমি আবার ভার্সিটির ক্যাম্পাসে ফিরলাম।
অনেকেই ঘুরে তাকালো, কেউ চোখ নামিয়ে নিলো, কেউবা এগিয়ে এসে বললো,
— "তুমি আমাদের অনুপ্রেরণা।"

আমার একসময়ের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ফারহানাও এগিয়ে এসে বললো,
— "তুই পারলি রে রম্য… এত সাহসীভাবে দাঁড়াতে? আমি তো কল্পনাও করতে পারি না…"

আমি শুধু হাসলাম। বললাম না কিছু।

বাড়ি ফিরতেই বাবা বসে ছিলেন বারান্দায়।
হাত বাড়িয়ে ডেকে বললেন,
— “তোর জন্য একটা চমক আছে।”

আমি অবাক হয়ে এগিয়ে গেলাম।
বাবা একটা খাম এগিয়ে দিলেন।
ভেতরে একটা চিঠি।

খুলে দেখি—

"আপনার সাহসিকতা ও অবস্থান নারীর ক্ষমতায়নে অনন্য উদাহরণ। আমরা আপনাকে আমাদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।"

আমার চোখ ছলছল করে উঠলো।
একটা অন্ধকারের গল্প শেষ করে আজ আমি আলোয় দাঁড়িয়ে আছি।
আমি জোরে বলে উঠলাম—
— “বাবা, আমি যাচ্ছি। আমি এখন শুধু তোমার মেয়ে না— আমি এখন হাজার মেয়ের আশা।”

তবে...

এই গল্প এখানেই শেষ নয়।
কারণ কিছু প্রশ্ন এখনও রয়ে গেছে—
রাফি কেন একা স্বীকার করলো?
সে কি শুধুই অনুতপ্ত ছিল?
না কি আরও কিছু আছে তার ভিতরে লুকোনো?

[চলবে…]

রম্য কাহিনী – পর্ব ৩ লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ

 



রম্য কাহিনী – পর্ব ৩
লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ

রাফি এখন আমাকে "মুন" নামে চেনে। তার ধারণা, আমি এক আধুনিক, স্বাধীনচেতা মিডিয়া গার্ল। এবং সে আমার প্রতি আগ্রহী—খুব দ্রুতই।

এই সুযোগটাই আমি চেয়েছিলাম। আগুনে পুড়িয়ে ছাই করার জন্য প্রথমে আগুনটাকে কাছে আনতেই হবে।

**

আজকে আমার ফেসবুক ইনবক্সে রাফির মেসেজ—
"Hi Moon, কাল Bliss ক্যাফেতে আসবা? তোমার সঙ্গে একটু দেখা করতে ইচ্ছা করছে…"

আমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রিপ্লাই দিলাম—
"Maybe… যদি তুমি আমাকে চা খাওয়াও, তাহলে ভাবা যায়।"

রাফি রিপ্লাই করলো এক চিলতে ইমোজি আর একটা ভয়েস—
"তোমার জন্য শুধু চা না, পুরো Bliss বুক করতেও রাজি আছি মুন…"

আমি ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করলাম।
এই লোকটাই সেই রাতের রাক্ষস।
তবুও আমি নিজেকে শান্ত করলাম—এখনো অনেক পথ বাকি।

**

পরদিন বিকেলে আবার সেই Bliss Café।
এইবার আমি হালকা নীল শাড়ি পরে এসেছি। নিজের মধ্যে একদম ভিন্ন একটা “মুন” গড়ে তুলেছি।
রাফি আমাকে দেখে চমকে উঠলো।

— ওয়াও! আজ তো পুরোপুরি সিনেমার হিরোইন লাগছে তোমায়।

আমি হেসে বললাম,
— ধন্যবাদ। তুমি আজও সেই গডফাদার মোডে আছো মনে হচ্ছে।

রাফি হাসলো,
— আমি এমনই... পাওয়ার দেখাতে ভালো লাগে।

সেদিন আমাদের মধ্যে অনেক কথা হলো। ওর বন্ধুরা দুজন এসে কিছুক্ষণ পর চলে গেলো। রাফি এবার একটু কাছাকাছি হয়ে আমার দিকে ঝুঁকে বললো—

— তুমি জানো মুন, তোমার চোখে কেমন একটা গভীর রহস্য আছে… অনেকটা কষ্ট লুকানো থাকে যেমন।

আমি এক মুহূর্ত থেমে বললাম—
— হয়তো। কিছু কষ্ট বলার নয়। ঠিক যেমন কিছু অপরাধও... ধরা পড়ে না সহজে।

রাফি মুহূর্তের জন্য চুপ করে গেলো। তার চোখে এক মুহূর্তের সন্দেহ।
কিন্তু আমি আবার হেসে বললাম—
— চিন্তা করো না, আমি গল্প করতে ভালোবাসি। সত্য-মিথ্যার মাঝে হারিয়ে যাই মাঝে মাঝে।

সে আবার হাসলো। আর আমি বুঝলাম, সন্দেহ কেটে গেছে।

**

রাত ৮টার দিকে রাফি আমাকে ক্যাফের বাইরে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিলো।

— আজকে চমৎকার একটা সন্ধ্যা কাটলো, বললো সে।

আমি উত্তর দিলাম—
— ধীরে ধীরে আমাকে বুঝবে, তখন আরও চমৎকার মনে হবে।

গাড়ির দরজা বন্ধ করার সময় আমি তাকিয়ে বললাম—
— তুমি কি কখনো এমন কিছু করেছো, যা বললে তোমার পরিচিত জগৎ তোমাকে চেনে না?

রাফি এক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকলো আমার চোখে, তারপর হেসে ফেললো—
— আমার সবকিছুই রহস্যে মোড়া। আমি যা করি, তার সিক্স পারসেন্টও কেউ জানে না।

আমি মাথা নেড়ে হালকা বললাম—
— আমি একদিন সেই শতভাগ জানবো রাফি…

গাড়ি ছাড়তেই আমার মনে হচ্ছিল আমি একটা দুঃস্বপ্নের পেছনে ছুটছি, যার শেষে হয়তো আমি নিজেও আর থাকবো না।

**

ঘরে ফিরে দেখি বাবা দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন।

— কোথায় ছিলে তুমি?

— একটা প্রজেক্টের কাজে।
— মিথ্যে বলো না।
বাবার কণ্ঠে রাগ নয়, বরং হতাশা।

— আমি ঠিক পথে আছি বাবা। শুধু একটু বিশ্বাস করো।

বাবা চলে গেলেন চুপচাপ। মা কেঁদে ফেললেন। আমি ওদের সামলাতে পারি না।
কারণ আমি জানি, এই যুদ্ধের মূল্য আমার পরিবারকেও দিতে হবে।

**

পরদিন সকাল।

আমার মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ—

"Moon, I like you… Let's go for a long drive today. Just you and me." – Rafi

আমি হেসে ফেললাম। ঠিক এই সুযোগটাই চাই।

এখন আমি চাই রাফি নিজেই তার মুখোশ খুলে ফেলুক।
আর তার আগে, আমি সব রেকর্ডিং চালু রাখবো।

আমার মোবাইলে গোপনে রেকর্ডিং অ্যাপ সেট করেছি।
আজকের ডেটই হবে সেই ভয়াবহ রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনার স্বীকারোক্তির সূত্র।

আমি জবাব দিলাম—

"Deal. But I have a condition… I’ll tell you during the drive."

**

সন্ধ্যায় আমরা শহরের বাইরের দিকে যাচ্ছি। গাড়ির মধ্যে হালকা মিউজিক।
রাফি গাড়ি চালাচ্ছে, আমি চুপচাপ জানালার দিকে তাকিয়ে আছি।
মোবাইল পাসেঞ্জার সিটের নিচে চালু রেকর্ডিং মোডে।

হঠাৎ রাফি বললো—

— জানো মুন, আমি জীবনটাকে গেমের মতো দেখি। আমরা যা চাই, তা নিয়ে নিই। ভয় পেলে মানুষ কিছুই পায় না।

আমি হালকা স্বরে বললাম—
— এমন কী নিয়েছো তুমি রাফি, যা ভয় না পেলে পেতে না?

রাফি হাসলো।
— আমি আর আমার বন্ধুরা এক রাতে একটা “রাজকন্যাকে” ধরে এনেছিলাম। একদম হট ছিলো। কিন্তু ওই রাতে বুঝেছি, ভয়, কান্না, আর লজ্জা—এই তিন জিনিস মেয়েদের কন্ট্রোলে রাখতে সবচেয়ে কার্যকর।

আমি চুপ করে আছি। রাফির মুখে উন্মাদ এক আত্মবিশ্বাস।

সে আরো বললো—

— মেয়েটার চেহারা এখনো আমার মনে গেঁথে আছে। ওর চোখে তখন আগুন ছিলো, কিন্তু আমরা ওটাকেই ভাঙলাম।

আমার হাতের মুঠো শক্ত হয়ে এলো। চোখ বেয়ে নেমে এলো জল।

রাফি এখনো জানে না—
এই "রাজকন্যা"ই আজ তার পাশে বসে আছে,
আর তার স্বীকারোক্তি, এখন আমার মোবাইলে রেকর্ড হচ্ছে।


রাফি কিছুক্ষণ চুপ করে ছিল। চোখে জল, কণ্ঠ ভারী। তারপর বলল,

— “আমি জানি, আমি দানব ছিলাম… এখনও মনে হলে নিজেকে ঘৃণা হয়। কিন্তু… তোমার জন্য নয়, নিজের জন্য। কারণ আমি জানি, আমি তোমার মতো একটি মেয়েকে… চিরজীবনের মতো ভেঙে দিয়েছি।”


আমি চুপ। কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না মুখ থেকে। শুধু তাকিয়ে আছি তার দিকে।

রাফি বলতে লাগল,

— “আমি অন্যদের মতো ছিলাম না। আমি ওদের থামাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শেষমেশ… আমিও নিজেকে থামাতে পারিনি। ভীড়ের উন্মাদনায় আমি হেরে গিয়েছিলাম… আমার বিবেককে চাপা দিয়েছিলাম… আমি দানবে পরিণত হয়েছিলাম।”


আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। শিউরে উঠছে শরীর। কিন্তু আশ্চর্য, আজ আমি আর কাঁদি না। আমার চোখে এখন শুধুই শীতল রাগ, প্রতিশোধের আগুন।

রাফি আবার বলল,

— “তুমি জানো? ওরা তো তোমাকে মেরে ফেলতেই চেয়েছিল। আমি বাধা দিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, ওকে জীবিত ফিরিয়ে দাও, নয়তো যা করেছি সব ফাঁস করে দেব। তখন ওরা আমাকে সন্দেহ করতে শুরু করেছিল। কিন্তু ওদের মুখ বন্ধ রেখেছিল আমার পুরনো শক্তি আর ভয়।”


আমি রেকর্ডারটা চালু করে রেখেছি গোপনে। তার স্বীকারোক্তি, তার মুখেই— এখন আমার কাছে অস্ত্র।

সে বলল,

— “তুমি যখন বিয়ের প্রস্তাব দিলে, আমি ভেবেছিলাম এটা কোনো ফাঁদ। আবার ভেবেছিলাম, যদি সত্যিই এটা একটা সুযোগ হয়… তাহলে হয়তো একবার নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারি।”


আমি এবার ঠান্ডা গলায় বললাম,

— “তুমি কি চাও আমি তোমায় ক্ষমা করি?”

সে এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল,

— “না। আমি চাই না তুমি আমাকে ক্ষমা করো। আমি শুধু চাই তুমি আমাকে ব্যবহার করো… তোমার পথের পাথরগুলো সরাতে। আমার শাস্তি তুমি নিজেই দাও… আমি তাতেই রাজি।”


আমি এবার উঠে দাঁড়ালাম।

— “তাহলে প্রস্তুত হও, রাফি। তুমি বলেছো তুমি শক্তিশালী? এবার আমি চাই তুমি নিজেই তোমার বন্ধুদের নাম বলো। এবং এটা রেকর্ড হবে। সব মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়বে।”


রাফি চমকে উঠল।

— “তুমি… রেকর্ড করছো?”

আমি ঠাণ্ডা হাসলাম,

— “হ্যাঁ। শুরু থেকেই। এবার যদি তুমি সত্যিই অনুতপ্ত হও, তবে ওদের নাম বলো। কে কে ছিলো? কার কী ভূমিকা ছিলো? কোথায় ওরা এখন?”


রাফি কিছুক্ষণ চুপ থেকে চোখ বন্ধ করল। তারপর ধীরে ধীরে বলল,

— “ওরা সাতজন ছিলো। আর আমি… সেই সাতজনের একজন।

১. রাশেদ – পরিকল্পনাকারী।

২. সোহেল – গাড়ির চালক, আমাকে সন্দেহ করে আজকাল।

৩. জুবায়ের – ভিডিও করেছিল।

৪. রাফিদ – মদ এনে দিয়েছিল।

৫. কামরুল – ভিকটিমকে ধরেছিল প্রথমে।

৬. আসিফ – ঘর পাহারা দিচ্ছিল।

৭. আমি… রাফি – যাকে তুমি বিয়ে করতে চাও।

এরা সবাই এখন ছড়িয়ে আছে শহরের নানা প্রান্তে। রাশেদ দেশের বাইরে পালাতে চাচ্ছে।”


আমি রেকর্ড বন্ধ করলাম। এবার আমার হাতে অস্ত্র। আমি জানি, আগামীকাল মিডিয়া, পুলিশ, আদালত— সবকিছু তোলপাড় হবে এই স্বীকারোক্তিতে।

আমি ধীরে ধীরে বললাম,

— “তুমি আমার শত্রু, আবার আজকের অস্ত্রও তুমি। এই দ্বৈত অবস্থানেই তোমার জায়গা থাকবে আমার জীবনে।”


রাফি কিছু বলল না। শুধু মাথা নিচু করে বসে রইল।


---

চলবে...

৪থ পর্ব লিংক 

https//www.rohosmoypartfour.com


রম্য কাহিনী – পর্ব ২ লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ




রম্য কাহিনী – পর্ব ২

লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ

আমার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে ছেলেটি দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। বাকিরা তখনো দাঁড়িয়ে, যেনো আদেশের অপেক্ষায়। আমি জানি কিছু একটা ভয়ঙ্কর হতে যাচ্ছে। গলার স্বর শুকিয়ে এসেছে, চোখে পানি জমে উঠেছে কিন্তু আমি আর কাঁদতে পারছি না। এখন আমার মধ্যে শুধুই একটাই অনুভূতি—বাঁচতে হবে। আর যেভাবেই হোক আমাকে এই দুনিয়ার সামনে দাঁড়াতে হবে।

রাতটা নরক হয়ে এলো। আমি সেসব বর্ণনা করতে পারবো না। পারি না, তবুও বলতে হয়—একজন, দু’জন, তিনজন... সাতজন। যেন আমি কোনো মানুষ নই, একটা বস্তু, একটা খেলনা মাত্র। কেউ থামাতে আসেনি, কেউ বাঁচাতে আসেনি।
একা আমি, সাতজন জানোয়ারের মাঝে।

পরদিন ভোরে আমার চোখ খুলতে পারিনি ঠিকমত। শরীরের প্রতিটি কোষ ব্যথায় কাঁপছিল। একটা কম্বলের মতো কিছু গায়ে জড়ানো ছিলো। রক্তের গন্ধ, ঘামের গন্ধ, কাঁটার মতো বিঁধছিল নাকে। ঘরটা তখন ফাঁকা, দরজাও খোলা।
হাঁটতে হাঁটতে বের হয়ে এলাম। মনে হচ্ছিল কোথাও একবার দম নিতে পারলে বাঁচি।

গেটের দিকে যেতে না যেতেই তাকে আবার দেখলাম—ওই ঝাকড়া চুলের ছেলে। হাতে এক কাপ কফি, মুখে সেই অদ্ভুত ঠান্ডা হাসি।
— এত তাড়াহুড়া কেনো প্রিন্সেস? এখনও তো খেলা বাকি!
আমি দৌড়াতে চাইলাম, কিন্তু সে এগিয়ে এসে আমার পথ আটকালো।
— একবার চিন্তা করে দেখো... জীবনটাকে নতুনভাবে শুরু করতে পারো। আমি চাইলে তোমাকে আমার করে নিতে পারি। সবাই যা করেছে, ওটা একটা খেলা ছিলো। কিন্তু আমি তোমাকে পছন্দ করে ফেলেছি।

আমি স্তব্ধ। মাথায় ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এই লোকটা কী বলছে? যাকে একদিন আগেও হায়েনার মতো মনে হচ্ছিল, আজ সে আমাকে ‘তার করে নেওয়ার’ কথা বলছে?

আমি কিছু বলিনি। শুধু তাকিয়ে ছিলাম তার চোখে। একটা কথা মাথায় ঘুরছিলো—এই লোকটার ভেতরে একটা ছায়া আছে... আর আমি যদি এটাকে ভাঙতে পারি, তবে কি প্রতিশোধ নেয়া সম্ভব?

**

তিনদিন পর, কে যেন আমাকে একটা নির্জন রাস্তার পাশে ফেলে গেছে। অচেতন অবস্থায় একটা বয়স্ক মহিলা আমাকে পেয়েছিলো। ওনার সহায়তায় আমি বাড়ি ফিরি।

কিন্তু ফিরে এসেই যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি, সেটা পুরো পরিবারকে কাঁপিয়ে দিলো।
— আমি ওদের একজনকে বিয়ে করতে চাই।

এটা শুনে আমার বাবা প্রথমে কিছুই বলতে পারেননি। মা চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন। ভাইয়েরা চুপচাপ, রাগে ফুঁসছিলো।
তারা জানে না, আমি কাকে বিয়ে করতে চাই।
তারা জানে না, আমার এই সিদ্ধান্তের পেছনে কী ভয়ানক প্ল্যান লুকিয়ে আছে।

হ্যাঁ, আমি প্রতিশোধ নিতে চাই। কিন্তু কোর্ট-কাছারি, পুলিশ এসব আমার চাই না।
আমি ওর ভেতরে ঢুকতে চাই। আমি ওর বিশ্বাস অর্জন করতে চাই। আমি চাই সে ভালোবাসার মোহে আমার সামনে সব সত্য খুলে বলুক—ওর নাম, ঠিকানা, তার অপরাধের ইতিহাস... আর বাকি ছয় জনের পরিচয়।

এই যুদ্ধ আমি একা লড়বো।

রাত গভীর হয়, আমি জানালার পাশে বসে থাকি। আকাশে তারা জ্বলে, আবার নিভে যায়। আমার হৃদয়ে ক্ষত, কিন্তু মস্তিষ্কে এক অদ্ভুত স্থিরতা।
এই যুদ্ধ যদি হেরে যাই, তবে সম্মান শুধু রক্তাক্ত হবে না, মরে যাবে চিরতরে।

আমার জীবনের সবচেয়ে অদ্ভুত একটা অধ্যায় এখন শুরু হতে যাচ্ছে। যে ছেলেটি এক রাতে আমার সবকিছু কেড়ে নিয়েছিল, আজ আমি তাকেই বিয়ে করতে চাই—এটা ভাবলেই নিজেকে পাষাণ মনে হয়। কিন্তু এই নাটকের নেপথ্যে রয়েছে এমন এক সত্য, যার মাধ্যমে আমি ওদের সবার মুখোশ খুলে দিতে চাই।

তিন দিন কেটে গেছে আমার সেই ঘোষণার পর। পুরো বাড়িতে একধরনের থমথমে পরিবেশ। মা চোখে-মুখে অভিমান, ভাইয়েরা রাগে ফুসছে, বাবা যেন নিশ্চুপ এক প্রস্তর মূর্তি। আমি কল্পনাও করিনি আমার এ সিদ্ধান্ত এতটা ঝড় তুলবে পরিবারে।

তবু আমি নীরব। এই নীরবতা আমার যুদ্ধের প্রথম অস্ত্র।

**

সেদিন সন্ধ্যায় বাবা আমাকে ডেকে পাঠালেন।
আমি নিঃশব্দে গিয়ে বসলাম তার সামনে। বাবা চুপ করে বসে ছিলেন কিছুক্ষণ, তারপর হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন—

— কে সে?

আমি থমকে গেলাম।
— তুমি ওদের একজনকে বিয়ে করতে চাও বলেছো। আমি জানতে চাই, সে কে?

আমি ধীরে বললাম,
— আমি এখনও নিশ্চিত না বাবা। আমি শুধু চেহারা মনে রেখেছি, নাম বা পরিচয় না। তবে আমি খুঁজে বের করবো। তুমি শুধু আমাকে সময় দাও।

বাবা ভ্রু কুঁচকে বললেন,
— সময় চাইছো? তুমি কি জানো তুমি কী চাইছো?

আমি চোখ তুলে বাবার চোখে তাকালাম।
— জানি। ভালো করেই জানি।

তারপর উঠে চলে এলাম ঘর থেকে।

**

এখন আমার হাতে আছে কেবলমাত্র সেই ঝাকড়া চুলওয়ালা ছেলেটির মুখ, তার আচরণ, তার অদ্ভুত ঠান্ডা চোখের চাহনি আর একটা নাম—যেটা সেদিন কেউ তাকে ডেকেছিলো: “রাফি ভাই”।

এই নামটুকুই এখন আমার একমাত্র সূত্র।

সোশ্যাল মিডিয়াতে সার্চ দিয়ে যাচ্ছি একটার পর একটা “রাফি” নামের প্রোফাইল।
প্রতিটা ছবির চুল খেয়াল করি—ঝাকড়া কি না। কারো ছবি ভালো করে জুম করে দেখি চোখের দৃষ্টি মিলে কিনা।
হঠাৎ একটা প্রোফাইলে গিয়ে থমকে গেলাম।

ছেলেটার ছবিতে সেই একই ঠান্ডা, অদ্ভুত হাসি। নাম: Rafi Al Noman
বেশ কয়েকটা ছবিতে দামি গাড়ি, দামি জামা, গলাতে সোনার চেইন, ডান পাশে সব সময় কয়েকজন যুবক—চেহারা গডফাদার টাইপের।

আমি নিশ্চিত এই লোকটিই সেই রাতের লিডার। আমার মনে পড়ছে, তার চোখ, তার চুল, এমনকি সেই ভয়ংকর গলা।

প্রোফাইল ঘেটে একটা তথ্য পেলাম—সে নিয়মিত একটি ক্যাফেতে যায় বন্ধুদের সঙ্গে।
“Bliss Café”। ঠিকানাও দেওয়া আছে।

**

পরদিন আমি নিজেই সেই Bliss Café-তে গেলাম।
একটা সাধারণ পোশাক পরে, মুখে হালকা মেকআপ দিয়ে এমনভাবে সাজলাম যেন কেউ সন্দেহ না করে।
ক্যাফেতে ঢুকে এক কোণে বসে পড়লাম। এক কাপ কফির অর্ডার দিয়ে চারপাশে নজর রাখছি।

প্রায় আধঘণ্টা পর, তাকে আসতে দেখলাম।

রাফি।
ঠিক সেই চেহারা। গলায় সোনার চেইন, চোখে সানগ্লাস, পাশে দুই বন্ধু। হেসে হেসে কথা বলছে।

আমি হৃদপিণ্ডের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি নিজের কানে। হাত কাঁপছে। কিন্তু মুখে কঠিন এক অভিব্যক্তি রাখলাম।
আজ এই রাফির সামনে দাঁড়াতে হবে আমাকে।

সে ক্যাফের একদম সামনের টেবিলে বসল। কিছুক্ষণ পরে ওয়েটারকে ডেকে কফির অর্ডার দিলো।

আমি ধীরে হাঁটলাম ওদের টেবিলের দিকে।
তারা আমাকে দেখে একটু তাকালো। আমি খুব সাহস করে বললাম—

— এক্সকিউজ মি, আমি কি এখানে বসতে পারি? অন্য টেবিলগুলো তো সব ফিল আপড।

রাফি আমাকে এক ঝলক দেখে ঠোঁটের কোণে এক অদ্ভুত হাসি টেনে বললো,
— অবশ্যই বসুন। আপনার মতো সুন্দরী মেয়ে চাইলে আমার পাশে সারাদিন বসতে পারেন।

আমি ভিতরে ভিতরে গলে যাচ্ছি, কিন্তু মুখে মুচকি হেসে বসে পড়লাম।
এটাই আমার প্রথম চাল। এই খেলাটা আমিই শুরু করলাম।

**

সেদিন আমি এক ঘন্টা কাটালাম ওদের সঙ্গে। আমার পরিচয় দিলাম “মুন” নামে। বললাম, মিডিয়াতে কাজ করি। কথা বললাম, মজা করলাম—সবই অভিনয়।
রাফি আমার নম্বর চাইল। আমি হেসে বললাম,
— ফেসবুকে আমাকে খুঁজে নিও। আমার ইউজারনেম: @moon.me.

রাফি বললো,
— সুন্দর নাম... ঠিক তোমার মতোই রহস্যময়।

হ্যাঁ, আমি এখন রহস্যই হতে চাই।
রাফি জানে না, তার খেলায় আমি এখন নিজেই খেলোয়াড়।
আমি এখন আগুনে ঝাঁপ দিয়েছি, পুড়তে পুড়তেই ওদের ছাই করে দিতে চাই।

চলবে...


৩য় পর্ব লিংক 

https//wwwrohosmotkhahini.com

নিরব চোখ পর্ব ৩ গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ

 




নিরব চোখ
পর্ব ৩
গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ

রুহির আঙুল ফ্ল্যাশড্রাইভটার উপর থেমে থাকে কিছুক্ষণ। যেন সেটা একটা বিষাক্ত বিষফোঁড়ার মতো ঠান্ডা লাগছে হাতে।

মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে—খুলবে তো? যদি ভেতরে এমন কিছু থাকে যা ও নিজেই সহ্য করতে পারবে না? আবার যদি সেটাই হয় যা ওকে শেষ করে ফেলবে?

কিন্তু সোজা হওয়ার পথ নেই আর। যেই খেলায় ও জড়িয়ে গেছে, সেটা এখন শুধু সত্য জানার প্রশ্ন না—বেঁচে থাকার লড়াই।

রাত ১টা বেজে ৩ মিনিট।

রুহি নিজের ল্যাপটপটা চালু করে। বিছানায় বসেই ফ্ল্যাশড্রাইভটি ঢুকিয়ে দেয় ইউএসবি পোর্টে।

ড্রাইভ ওপেন করতেই দেখতে পায় একটি ফোল্ডার—"For Ruhi_Only"

ভেতরে তিনটি ভিডিও ফাইল। একটি নাম:

“Before_You_Knew”,
আরেকটি: “They_Lied”,
তৃতীয়টি: “Truth_And_Trap”

রুহি প্রথম ফাইলটি ওপেন করে—"Before_You_Knew"। ভিডিও চলতে শুরু করে।

ক্যামেরার ফ্রেমে তার বয়ফ্রেন্ড রায়ান। রায়ান—যাকে রুহি ভাবত তার সবচেয়ে কাছের মানুষ।

কিন্তু রায়ানের পাশে আরও দু’জন—তারা হাসছে, এক অন্ধকার ঘরে বসে। কথায় কথায় বের হয়ে আসে রুহির নামে কুৎসিত ব্যঙ্গ, এমন কথা যা রুহি কখনো ভাবতেই পারেনি।

“ওর মতো সোজা মেয়েকে বোকা বানানো কোনো ব্যাপার না,” রায়ান বলছে।
“মাইন গেমস খেলতে খেলতে ও তো এখন প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।”

“আরেকটু সময় দে,” পাশে থাকা একজন বলে। “তারপর প্ল্যানের দ্বিতীয় ধাপে যাব।”

রুহির কানে যেন একটা বিস্ফোরণ ঘটে। মাথার মধ্যে রক্ত উঠে যায়। ওর পুরো শরীর কাঁপতে থাকে।

দ্বিতীয় ভিডিও—They_Lied—খুলে দেখে রুহি স্কুল লাইফের পুরোনো বন্ধুদের। এক সময়ের ছায়াসঙ্গীরা কীভাবে ওকে নিয়ে ঠাট্টা করত, রেকর্ড করা ফুটেজে সব উঠে এসেছে।

তবে সব চেয়ে ভয়ানক ছিল তৃতীয় ভিডিও—Truth_And_Trap

এই ভিডিওতে দেখা যায়, রুহিকে যেদিন পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তার আগেই সেখানে গোপনে ক্যামেরা বসানো হয়। ভিডিওর শুরুতে কয়েকজন ছেলে আলাপ করছে—

“সব রেকর্ড হবে। শুধু ভয় না, পরে ব্ল্যাকমেইলও করতে পারব।”
“ওর কোনো প্রমাণ থাকবে না। আমাদের প্ল্যান পারফেক্ট।”
“আর ওর যদি ভুলেও কাউকে বলে, তখন ভিডিও দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেব।”

রুহি আর বসে থাকতে পারে না। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু সেই চোখে এখন ভয় নেই—আছে রাগ, প্রতিশোধ।

হঠাৎ স্ক্রিনে একটি নতুন ফোল্ডার আপিয়ার হয়: “Live_Surveillance”

ওটা খুলতেই রুহি স্তব্ধ হয়ে যায়।

লাইভ ক্যামেরার ফুটেজ—ওর নিজের ঘরের! ঠিক ওর ডেস্কের কোণার ওপর দিয়ে ফ্রেম আসছে।

রুহি দ্রুত চারপাশে তাকায়। খুঁজতে শুরু করে, কোথায় সেই ক্যামেরা? খুঁজে পায় ছোট একটা হোলের মতো বসানো কিছু—ওটা থেকে ভিডিও করা হচ্ছে।

হাত বাড়িয়ে সেটা ছিঁড়ে ফেলে। টান দিয়ে ভেঙে ফেলে।

তারপর আবার ফোল্ডারে ফিরে এসে দেখে, স্ক্রিনে একটা পপ-আপ মেসেজ উঠেছে—

“তুমি এখন যা করেছো, সেটা ঠিক ছিল। কিন্তু এবার পালানোর সময় নয়—প্রস্তুত হও।”

“তারা আবার আসবে। আর এইবার, আমি হয়তো কাছে থাকব না।”

—নীরব চোখ

রুহির বুকের ভিতরে হিম শীতল বাতাসের ঝাপটা লাগে।

“তারা” কারা?
“নীরব চোখ” কে?
সে কি সত্যিই একা?

পরদিন সকাল।
রুহির দরজার নিচ দিয়ে ঢুকে আসে একটা কাগজের টুকরো—কোনো খাম নেই, কোনো শব্দ নেই।

কাগজে লেখা:

চতুর্থ অধ্যায়ের শুরু আজ রাত ১টায়। গ্লাসে পানির নিচে কিছু রেখে দিও। যদি দেখো রং বদলেছে, তাহলে বুঝবে—তারা তোমার বাড়ির ভেতরেই আছে।

রুহি বুঝতে পারে, খেলা এখনও চলছে—আর, শিকার কে আর শিকারি কে, সেটা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।

চলবে…



নিরব চোখ পর্ব ২ গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ

 




নিরব চোখ
পর্ব ২
গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ

রুহি আয়নার দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে।


ওয়াশরুমের বাষ্পে ধূসর হয়ে যাওয়া আয়নার মাঝে হঠাৎ যেন একটি ছায়া ফুটে উঠেছিল। মুখটা অস্পষ্ট, কিন্তু ঠোঁটদুটো নড়ছে। রুহি ভয় আর বিস্ময়ে পেছনে তাকায়—কেউ নেই!


আবার আয়নায় চোখ ফেরাতেই লেখাটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যেন কেউ আঙুল দিয়ে লেখা:


“আমি দেখছি তোমাকে। ভয় পেও না।”

রুহির হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। সে তাড়াতাড়ি আয়না মুছে দেয়। কিন্তু লেখাগুলো তখন আর নেই।


গোসল না করেই বেরিয়ে আসে সে। মোবাইল হাতে নেয়। নাম্বারটি আবার কল করে—তবু ফোন বন্ধ।

হঠাৎ আবার একটা মেসেজ—


"আজ বিকেল ৪টা ৪৭ মিনিটে তোমার ব্যালকনির নিচে একজন লোক দাঁড়াবে। সে তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাইবে না। শুধু একটা খাম দিয়ে চলে যাবে। খামটা একা থাকতেই খুলবে। কাউকে দেখিও না।"

 

রুহি ফোনের সময় দেখে, ৪টা ৩৯ বাজে। মন যেন বিশ্বাস করতে চায় না, কিন্তু ঘটনাগুলো যেভাবে ঘটছে, অস্বীকারও করতে পারে না।


সে ব্যালকনির পর্দা একটু সরিয়ে নিচে তাকায়। ৪টা ৪৭-এ ঠিক সময়মতো একটি ছেলেমানুষ দাঁড়ায় নিচে, মুখ নিচু। পরনে ধূসর শার্ট। হাতে খাম।


দরজার বেল। রুহি ধীরে ধীরে দরজা খুলে দেখে, লোকটা মুখ না তুলেই খামটি বাড়িয়ে দেয়। কথা না বলে সোজা চলে যায়।


রুহি দরজা বন্ধ করে ভেতরে আসে। খামটা একটু কাঁপা হাতে খোলে।


ভেতরে একটি চিরকুট:

"তোমাকে শুধু আমি দেখছি না, ওরাও দেখছে।
আজ রাত ১২টার মধ্যে তোমার ঘরের পশ্চিম দেয়ালের পেছনে লুকানো দরজাটা খুলে দেখো।
যদি দেরি করো, একজোড়া চোখ আর কখনো আলো দেখবে না।"

 

রুহির নিঃশ্বাস আটকে আসে। ওর তো ঘরের পশ্চিম দেয়ালে কোনো দরজা নেই! তাহলে?


রাতে ঘুম আসে না তার। দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকে।

রাত ১১টা ৫৮। সে ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট টর্চ বার করে ধীরে ধীরে দেয়ালের দিকে এগোয়। দেয়ালটা খালি মনে হলেও একটা কোণায় টিপে ধরতেই হালকা ঠকঠক শব্দ হয়। দেয়ালের একটা অংশ একটু ভেতরে দেবে যায়


হৃদকম্পনের মাঝে সে চাপ দেয়। একটা ছোট গোপন দরজা খুলে যায়। ভিতরে অন্ধকার।


রুহি ভেতরে ঢোকে না, শুধু টর্চটা এগিয়ে দেয়।

টর্চের আলোয় দেখা যায় ছোট একটা কাঠের বাক্স। সেটা টেনে বের করে আনতে গিয়ে সে দেখে, নিচে আরেকটা কাগজ গুঁজে রাখা।


বাক্স খুলতেই ভেতরে একগুচ্ছ পুরনো চিঠি, কিছু পছন্দের ছবি, আর... একটি ফ্ল্যাশড্রাইভ।


চিঠির প্রথমটাই রুহির নিজের নাম ধরে লেখা—

“রুহি, তুমি যাকে ভালোবাসো, সে কখনো তোমাকে ভালোবাসেনি।
যাদের বন্ধু ভেবেছ, তারা কখনোই তোমার বন্ধু ছিল না।
এই ফ্ল্যাশড্রাইভে এমন কিছু আছে, যেটা তোমার পুরো জীবন বদলে দেবে।
কিন্তু মনে রেখো—তুমি একা নও। আমি আছি। আমি সব জানি।

— নীরব চোখ”

 

রুহি তখনও জানে না, এই ফ্ল্যাশড্রাইভে কী আছে, অথবা কে এই ‘নীরব চোখ’।

কিন্তু তার মন বলে—এটা শুধুই শুরু।

চলবে…



পর্ব ৩ লিংক


https//www.nirobcokpartsecend.com


গল্প: হতভাগা পর্ব: ১৩ লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ

গল্প: হতভাগা

পর্ব: ১৩

লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ



শায়লা রহমান, যিনি এক সময় একটি বড় প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন, এখন দুনিয়া থেকে একপ্রকার নির্বাসিত। তার রাজনৈতিক ও আর্থিক খ্যাতি প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। কিন্তু শায়লার কাছে এখনও কিছু শেষ ত্রুটি ছিল—তিনি জানতেন, তার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক সম্পর্কগুলি তাকে রক্ষা করতে পারে। তার বিরুদ্ধে মামলাও চলছিল, তবে শায়লা নিজের ক্ষমতার শেষ নিঃশেষ করতে চায়নি। এমন একটি সময়ে, সে একটি নতুন ষড়যন্ত্রের ছক কষে।


একটি গোপন মিটিংয়ের মাধ্যমে শায়লা বিভিন্ন ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, এবং কিছু মিডিয়া ব্যক্তিত্বকে একত্রিত করে। তার পরিকল্পনা ছিল, নাদিয়া ও তার শিকড় প্রজেক্টের কর্মকাণ্ডকে সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসী সমর্থক হিসেবে তুলে ধরা। এর মাধ্যমে তার প্রজেক্টের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে এবং নাদিয়াকে তার পথ থেকে সরিয়ে ফেলা যাবে।


"আমরা যদি তার কাজের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে পারি, তাহলে তার প্রজেক্টটি পৃথিবীজুড়ে অচল হয়ে যাবে। আমাদের উপস্থাপন করা তথ্য ও প্রমাণ যদি মিথ্যা না হয়, তবে তাকে ঘিরে সৃষ্টি হবে এক বড় বিপদ," শায়লা সভায় বলছিল।


এবার শায়লা আরও একবার তার শত্রু নাদিয়ার বিরুদ্ধে চক্রান্তে মগ্ন ছিল। তবে সে জানত, এবার আগের মতো সহজ হবে না।




নাদিয়া জানত, শায়লা হারলেও তার ষড়যন্ত্র থামবে না। নাদিয়া নিজেকে প্রস্তুত রাখছিল এমন এক পরিস্থিতির জন্য, যেখানে তাকে শুধু নিজের প্রজেক্ট নয়, পুরো পৃথিবীকে রক্ষা করতে হবে। শায়লার পরিকল্পনার খবর পাওয়ার পর, নাদিয়া এবং তার দল দ্রুত একটি নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করল।


একদিন, নাদিয়া তার দলের সাথে মিটিংয়ে বলল—


“শায়লা আবার কিছু করতে চাইছে। কিন্তু আমরা জানি, তার ষড়যন্ত্রের শেষ কোথায়? আমাদের যদি জনগণের বিশ্বাস অর্জন করতে হয়, তাহলে আমাদের আরও বেশি সতর্ক এবং সংগঠিত হতে হবে। শিকড় প্রজেক্ট শুধুমাত্র একটি প্রজেক্ট নয়, এটি এখন একটি আন্দোলন। আমরা যা করছি, তার মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের কল্যাণ। এটি কখনোই কোনো ধরনের সন্ত্রাস বা সহিংসতার সাথে যুক্ত হতে পারে না।”


নাদিয়া বিশ্বাস করত, সত্যের শক্তি শেষ পর্যন্ত জিতবে। সে জানত, শায়লা যতই চেষ্টা করুক, জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্ব এবং সঠিক পথের প্রতি তাদের অবিচল বিশ্বাসই তাদের জয়ী করবে।




শায়লা যখন তার ষড়যন্ত্র চালাতে থাকে, তখন তার প্রজেক্টের বিরুদ্ধে মিডিয়া এবং জনমত তৈরি করার প্রচেষ্টা শুরু হয়। প্রথম দিকে, তার কিছু চক্রান্ত কিছুটা সফলও হয়েছিল। কিছু মিডিয়া রিপোর্ট এবং সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে শিকড় প্রজেক্টের বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ উঠতে শুরু করে। তবে শায়লার পরিকল্পনা যেমনই শক্তিশালী হোক, নাদিয়া ও তার দলের কঠোর পরিশ্রম এবং সততার কারণে, খুব দ্রুত এর প্রতিক্রিয়া পাওয়া শুরু হয়।


একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম শিকড় প্রজেক্টের সঠিক কাজের প্রমাণ পেয়ে, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে যায়। মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়—


“শিকড় প্রজেক্টের কাজ বিশ্বের এক অনন্য সামাজিক উদ্যোগ। যাদের উদ্দেশ্য মানুষের উন্নতি, শিক্ষা এবং কল্যাণ, তারা কখনোই সন্ত্রাস বা সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না।”


এতে শায়লা আরও একবার হার মানতে বাধ্য হয়। তার যেসব চক্রান্ত এবং অপপ্রচার চালানো হয়েছিল, সেগুলি জনমনে অবিশ্বাস সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়।




নাদিয়া জানত, শায়লা পুরোপুরি হারেনি, তবে তিনি যে জনগণের সমর্থন পেয়েছেন, সেটি ছিল তার বড় শক্তি। শায়লার বিপদ থেকে একধাপ এগিয়ে, নাদিয়া এবং তার দল এক নতুন পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা ঠিক করেছিল, এবার পুরো পৃথিবীতে শিকড় প্রজেক্টের কাজ আরও দৃঢ়ভাবে তুলে ধরা হবে।


নাদিয়া তার পরিকল্পনাটি দলের সদস্যদের জানাল—


“আমাদের কাজ এখন শুধু আমাদের দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমরা আরও বড় প্রজেক্ট চালু করবো—বিশ্বব্যাপী শিক্ষার ক্ষেত্রেও আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করবো। আমাদের লক্ষ্য বিশ্বজুড়ে এমন একটি উদ্যোগ গড়ে তোলা, যেখানে প্রতিটি শিশুর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে।”


তার এই বক্তব্য শিকড় প্রজেক্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি নতুন দিশা দেখিয়ে দিল। নাদিয়া জানত, এটাই তার প্রজেক্টের মূল উদ্দেশ্য। তিনি এই পৃথিবীকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং ন্যায্য সমাজ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইতেন।




শায়লা, যিনি কখনোই নিজের আত্মসম্মান হারাতে চায়নি, এবার একেবারে শেষ চক্রান্তের দিকে এগোচ্ছিল। তার পরিকল্পনা ছিল, সে কিছু শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক নেতাদের একত্রিত করে একটি নতুন গোপন জোট তৈরি করবে। এর মাধ্যমে তিনি নাদিয়ার প্রজেক্টের মূল স্তম্ভের বিরুদ্ধে কাজ করবেন।


তবে, শায়লার শেষ চক্রান্ত ছিল তার নিজের শেষ ধাপ। এই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তিনি ভাবতেন, আবার একবার নাদিয়াকে পরাজিত করতে পারবেন, কিন্তু তার অজানা ছিল, নাদিয়া যে শক্তির সঙ্গে তার দলের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে, তা কখনোই পরাজিত হবে না।


এদিকে, আরিজ শিকড় প্রজেক্টের জন্য একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠছিল। তার মেধা এবং কাজের প্রতি আগ্রহ দেখে, নাদিয়া তাকে আরও বেশি দায়িত্ব দিয়েছিল। একদিন, আরিজ তার মায়ের কাছে এসে বলল—


“মা, আমি কিছু একটা করতে চাই। শিকড় প্রজেক্টের জন্য আরও ভালো কিছু করতে চাই। আমি জানি, এই মুহূর্তে তুমি অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, কিন্তু আমি তোমার পাশে আছি। তোমার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমি সাহায্য করতে প্রস্তুত।”


নাদিয়া তার ছেলের কথা শুনে চুপচাপ কিছুক্ষণ ভেবেছিল। তারপর সে বলেছিল—


“আরিজ, তুমি যে এতো বড় কিছু করতে চাও, তা দেখে আমি গর্বিত। তবে, মনে রেখো, জীবনটা এক পথ নয়, বহু পথের সমষ্টি। তুমি যদি সত্যিকারের পরিবর্তন চাও, তোমাকে সৎভাবে কাজ করতে হবে, আর মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।”


আরিজের চোখে এক নতুন আগ্রহ দেখা দিয়েছিল। সে জানত, তার মা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তারও সেভাবে এগিয়ে যেতে হবে।


চলবে...

গল্প: হতভাগা

পর্ব: ১৩

লেখক: গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মদ